বিবাদী বাগে ডিউটি করছিলেন হেডকোয়ার্টার ট্রাফিক গার্ডের সার্জেন্ট তুহিন রায়চৌধুরী। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে লক্ষ্য করছিলেন তার থেকে একটু দূরে ফুটপাথে বসে আছেন এক বয়স্ক ব্যক্তি, চোখ মুখ দেখেই সার্জেন্ট তুহিন রায় চৌধুরীর মনে হয় ওই বৃদ্ধ ব্যক্তি ক্ষুধার্ত। শূন্য দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন এদিক ওদিক, যেন দিশাহারা, নিরুপায় একজন মানুষ।
তাঁকে জিজ্ঞেস করে তুহিন জানতে পারলেন, সত্যিই অনেকক্ষণ কিছু খাননি ওই বৃদ্ধ। শুনে সময় নষ্ট না করে নিজের টাকা দিয়ে জল এবং খাবারের ব্যবস্থা করলেন তুহিন। খাবার খেয়ে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ভদ্রলোক জানালেন, তাঁর নাম মাধব মণ্ডল, বয়স ৮০, বাড়ি হুগলি জেলার পান্ডুয়ায়।
এই খবর পাওয়া মাত্রই তৎক্ষণাৎ হেডকোয়ার্টার জানান তুহিন। সেখান থেকে খবর চলে যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায়। থানা থেকে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন সাব-ইন্সপেক্টর শেখর সরকার। তারপর মাধববাবুকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। ততক্ষণে কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছেন বৃদ্ধ। তিনি জানাচ্ছেন, তাঁর চার ছেলে, অথচ একজনেরও নাম ঠিকানা মনে পড়ছে না। কিভাবে পান্ডুয়া থেকে কলকাতায় এসে পড়েছেন তাও মনে করতে পারছেন না।
ঘটনাচক্রে পান্ডুয়ার বাসিন্দা এবং হেডকোয়ার্টার গার্ডের সিভিক ভলান্টিয়ার অশোক হাঁসদা বহু খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। কিছুটা সময়ের পরে জানালেন, মাধববাবুর বাড়ি সেখানকার তালবনা গ্রামে। এই গ্রাম যে তাদের এলাকায় পড়ে, তা নিশ্চিত করল পান্ডুয়া থানাও। কিন্তু মাধববাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় না দেখে অবশেষে গাড়ি ভাড়া করে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন শেখর। গাড়িভাড়া দিলেন শেখর এবং তুহিন দুই পুলিশ অফিসার।
মাধববাবুকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিলেন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার অশোক হাঁসদা এবং অজয় বেলদা, সঙ্গে হেয়ার স্ট্রিট থানার কনস্টেবল মনোতোষ দাস। পান্ডুয়া থানার সাহায্যে বাড়ি পৌঁছে চোখের জল শেষ পর্যন্ত আর ধরে রাখতে পারেননি অশীতিপর বৃদ্ধ। আর সেই চোখের জলে মিশে ছিল অনুচ্চারিত কৃতজ্ঞতা যা হয়তো বহুদিন পর্যন্ত তুহিন, শেখরদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
You must be logged in to post a comment.