বাংলাদেশ

সংকটে ভারত–বাংলাদেশ জলপথ

বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে ১০টি জলপথ রয়েছে। তার একটি হল ব্রহ্মপুত্র নদে বাংলাদেশের চিলমারী থেকে অসমের ধুবড়ি। কলকাতা থেকে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ যাতায়তের পথও এটি। ভারতের অসমের সঙ্গে যে দু’টো গুরুত্বপুর্ণ জলপথ রয়েছে তার একটি হল বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ থেকে দইখাওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ অসমের ধুবড়ি সীমান্তের আগে পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথ। এই অংশেই রয়েছে চিলমারী। অর একটি— আশুগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথ।
এই দুই জলপথ খননে ভারত সরকার ৮০ শতাংশ অর্থের জোগান দিচ্ছে। বাকি ২০ শতাংশ বাংলাদেশের। ৮০ শতাংশ অর্থব্যয়ের কারণ হল, এই জলপথ দু’টো ভারত পণ্যপরিবহনে ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশও ব্যবহার করে আসছে। ফলে রাজস্ব যাচ্ছে সরকারের কোষাগারে। এই দু’টি জলপথই ধুঁকছে নাব্যতাহীনতায়। অথচ দু’টি জলপথই বিপুল সম্ভাবনাময়। এই জলপথ খননে ভারত সরকারের ৮০ শতাংশ খরচ বহন করার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা।
এখানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা যোগে ব্রহ্মপুত্রের বুক চিরে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক চলার পর ধুবড়ি সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে দেখা গেল, ভারত–বাংলাদেশের পতাকাবাহী কার্গো থেকে অপর একটি কার্গোয় পাথর খালাস করা হচ্ছে। অসম থেকে পাথর এনে তা সরবরাহ করেন সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে। নাব্যতাসংকটে পাথরবাহী ৫টি কার্গো আটকে পড়ায় ব্যবসা এখন বন্ধের পথে।
এই প্রেক্ষিতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক তাৎক্ষণিক বৈঠক করে পাথরবোঝাই কার্গোগুলো উদ্ধারের নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরও কেটে যায় প্রায় দু’মাস। দীর্ঘদিন আটকা থাকার পরও কোনও সহায়তা না পেয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহার করে উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য পণ্যপরিবহনে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিল ভারত। তাই ২০১৬ সালের জুনে ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে প্রথম পণ্যপরিবহন শুরু হয়। এর আগেও মানবিক কারণে বিনা মাশুলে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যপরিবহনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। পরবর্তী পর্যায়ে ভারত–বাংলাদেশ জলপথ ব্যবহারে আন্তর্জাতিক নৌ–প্রোটোকলের আওতা বাড়তে থাকে। কিন্তু নাব্যতাসংকটের মুখে নৌবাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০২০ সালের ৯ মার্চ তাঁর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশোধনী খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সেদিনের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম দুই দেশের মধ্যে নৌবাণিজ্য আরও গতিশীল করতে নতুন কয়েকটি ‘পোর্ট অব কল’ ঘোষণা করা ছাড়াও নতুন প্রোটোকল রুট সংযোজনের কথা জানান।