লিড নিউজ

সুপার সাইক্লোন হচ্ছে আমফান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত ঘূর্ণিঝড় আমফান ক্রমশ শক্তি বাড়াচ্ছে। সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে তার। তেমনটা হলে রাজ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। রাজ্যে জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা। আবহাওয়া দপ্তরের এই পূর্বাভাস পেয়ে যুদ্ধকালীন তত্‍‌পরতা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রণকৌশল ঠিক করতে সোমবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কাকদ্বীপের মহকুমা শাসকের দপ্তরে আধিকারিকদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এলাকার দুই বিধায়ক, পুলিশ সুপার এবং প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‌সুন্দরবন এলাকার উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়াও সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে মাইকিং করে এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করা হচ্ছে।’‌
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আর জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ বৈঠক বসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘূর্ণিঝড়টি এই মুহূর্তে দিঘা থেকে ৯৩০ কিমি দক্ষিণ–দক্ষিণ–পশ্চিমে রয়েছে। সোমবার বিকেলের মধ্যেই সেটি সুপার সাইক্লোন হতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আমফানের জেরে সর্তকতা জারি হল রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায়। ফলে আগামী কয়েক দিন সমুদ্র উত্তাল হবে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়া সঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি পূর্বাভাস আবহওয়া দপ্তরের। সতর্ক প্রশাসন। দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর, শঙ্করপুরের মতো পর্যটন কেন্দ্রে বাড়তি নজরদারি। শনিবার রাত থেকেই মাইকিং করছে পুলিশ। রবিবার দিঘার সমুদ্রসৈকত কার্যত ফাঁকা। লাগাতার মাইকিং করেছেন দিঘা থানা, দিঘা মোহনা থানা এবং মন্দারমনি কোস্টাল থানার কর্মীরা। সতর্ক করা হয়েছে মত্‍স্যজীবীদের।
অন্যদিকে জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে আমফান শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে। গভীর সমুদ্রে ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬৫ কিলোমিটার হতে পারে। উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় শক্তি কিছুটা কমবে। তবে তা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটার হতে পারে। দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মধ্যে কোথাও স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এই ঘূর্ণিঝড়। সুন্দরবনে সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুরীতে সমুদ্রবর্তী সব দোকান আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। সৈকতে চলছে মাইকিং। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে পৌঁছেছে এনডিআরএফের দল। পুরী, ভুবনেশ্বর, জাজপুর, ময়ুরভঞ্জ–সহ একাধিক জায়গায় এনডিআরএফের ১০টি টিম নেমেছে। এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতা থেকে ১০৬৭ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং দিঘা থেকে ৯৮০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে রয়েছে। তবে গত ১২ ঘণ্টায় উত্তরমুখীর বদলে সে কিছুটা উত্তর–পূর্বমুখী হওয়ায় ‘ল্যান্ডফল’ –এর এলাকায় কিছুটা বদল আসতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে রাজ্যের উপকূলবর্তী এবং কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। এর পর যত সময় এগোবে তত বৃষ্টি এবং হাওয়ার দাপট বাড়বে। বুধবার রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী এবং কোথাও কোথাও চরম অতি ভারী বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে। ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে কলকাতা। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫৫ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ঝড়ের প্রভাবে দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতায় ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হতে পারে। উত্তরবঙ্গেও অতি ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।