সব জল্পনা অবসান। তৃণমূল ভবনে ফিরল সেই পুরনো ছবি। পাশাপাশি আসনে বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুকুল রায়। শুরুতেই মমতা বললেন, ‘মুকুল আমাদের ঘরেরই ছেলে, ঘরে ফিরল।’ সভাঘরে মুকুল রায় ও শুভ্রাংশুকে উত্তরীয় পরে দলে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভাঘরে উপস্থিত রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, ফিরহাদ হাকিম, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ দলের প্রথমসারির সব নেতারা।
সালটা ২০১৫। পশ্চিমবঙ্গে এসে তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে বিঁধতে নতুন স্লোগান শুরু করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং। সেটা ছিল—‘ভাগ মুকুল ভাগ’। সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পর সিদ্ধার্থনাথের সেই স্লোগান বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। কিন্তু সেই মুকুল রায়কেই ২০১৭ সালের ৩ নভেম্বর বুকে টেনে নেয় বিজেপি। শাহী দরবারে গিয়ে পদ্মশিবিরে যোগদান করেন তিনি।
তিনি নিজে বিজেপিতে যাননি, বরং একের পর এক তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। ঘাসফুলকে ভেঙে রীতিমতো খানখান করে দিয়েছিলেন। কিন্তু, বিজেপিতে গিয়ে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলেও পায়ের তলার মাটিটা ঠিক শক্ত করে উঠতে পারেননি মুকুল। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদ পেয়েছিলেন। কিন্তু যে নেতা নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য পরিচিত, তাঁকে একুশের বিধানসভা ভোটে সেভাবে ব্যবহারও করেনি বিজেপি।
রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তাঁকে শুরুতেই ‘চাটনি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অর্থাৎ কোথাও গিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর শামিল হওয়াকে বিজেপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। সেই থেকেই দুই ভাগে ভেঙে যায় বিজেপি। যদিও দলে বেশ গুরুত্ব বাড়ে মুকুলের। বুথ স্তরে বিজেপির সংগঠনে শান দেন মুকুল। তৃণমূলের মেশিনারি তৃণমূলেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করে পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে বড় সাফল্য পান। বিজেপিকে ২ বিধানসভা আসন থেকে ১৮ আসনে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্বও মুকুলকেই দেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা।
২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদে আসেন তিনি। যদিও, সর্বভারতীয় পদ পেলেও জাতীয় স্তরে তাঁকে তেমন সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে পাওয়া যায়নি।
ফেরার মঞ্চ তৈরি হয়েই গিয়েছিল। তবে অপেক্ষা ছিল শুধুমাত্র নেত্রীর সম্মতির। গত ৩০ মার্চ নন্দীগ্রামের সভা থেকে সেই সংকেত দিয়ে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, মুকুল শুভেন্দুর মতো অতটা খারাপ নয়। মুকুলবাবুর অসুস্থ স্ত্রী-কে দেখতে হাসপাতালে যান তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গে। তখন থেকেই জল্পনা আরও বৃদ্ধি পায়। আজ তা সত্য প্রমাণিত হল।