কৃষি বিল নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে এখন তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই বিল ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে সংসদে। এখন শুধু অপেক্ষা রাষ্ট্রপতির সাক্ষরের। তাহলেই তা আইনে পরিণত হবে। এই বিষয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, এতদিন হাত–পা বাঁধা ছিল চাষিদের। সেই বন্ধন মুক্ত করতেই কৃষি সংস্কারের পথে হেঁটেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এই বিল আইনে পরিণত হলে, চাষিদের কষ্টার্জিত ফসল নিজেরা ইচ্ছেমতো যে কোনও জায়গায় বিক্রি করতে পারবেন। কিষান মান্ডিতে শস্যপণ্যের না দাম পেলে যে কোনও জায়গায় বিক্রি করার স্বাধীনতা চাষিদের দেওয়া হয়েছে। আর ন্যূনতম সহায়ক মূল আগে যেমন ছিল, এখনও তেমনই থাকবে। দেশের কৃষি ব্যবস্থার পরিপন্থী নয় এই সব বিল।
বিরোধীদের দাবি, এই বিল আইনে পরিণত হলে ফড়ে–দালালদের চক্র সক্রিয় হয়ে উঠবে। চাষীরা ন্যায্য দাম পাবে না। অথচ ফসল বিক্রি হয়ে যাবে। সেই ফসল আমদানি–রপ্তানি করে বিপুল টাকার মুনাফা করবে ব্যবসায়ীরা। এমনকী এখানে নেমে পড়বে আম্বানি–আদানি গোষ্ঠীর মতো শিল্পপতিরা। ফলে সেই আত্মহত্যার পথে যাবে দেশের কৃ্যকরা।
এই গোটা বি্ষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘গায়ের জোরে কৃষক স্বার্থের পরিপন্থী কৃষি বিল পাশ করিয়েছে কেন্দ্র। হিটলারি কায়দায় দেশ চলছে। যেভাবে কৃষি বিল আনা হয়েছে তাতে দেশে দুর্ভিক্ষ হবে।’ রাজ্যসভায় বিক্ষোভ দেখিয়ে সাসপেন্ড হয়েছেন তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন–সহ ৮ জন সাংসদ। তখনই বিজেপি গণতন্ত্রকে হত্যা করছে বলে ট্যুইটারে শুরুতেই তোপ দেগেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেন, ‘সংসদে আন্দোলন চলছে। মঙ্গলবার থেকে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস, বুধবার ছাত্র আর বৃহস্পতিবার দিন কৃষক ও ক্ষেতমজুর রাজ্যে লাগাতার আন্দোলন চলবে।’
এদিকে আজ ডেরেক ও’ব্রায়েন ও দোলা সেন, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, কংগ্রেসের রাজীব সাতাব, রিপুন বরা ও সৈয়দ নাসির হুসেন এবং সিপিএমেরর কে কে রাগেশ ও এলামারাম করিম সংসদ ভবনের সামনের লনে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেছেন। এই আন্দোলনকে সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘সারা দেশকে সামনে রেখে তৃণমূল কংগ্রেস প্রয়োজনে বসে কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে আন্দোলনে থাকবে। সব বিরোধীরা একজোট হন। কৃষক ও শ্রমিক আজ বিপন্ন। উলঙ্গ রাজা তোমার কাপড় কোথায়?’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, মানুষ খেতে না পেলে তৃণমূল আন্দোলন করবেই। বিরোধীরা যা করেছে তা ঠিক করেছে। ওরা কৃষকদের স্বার্থে লড়েছে। ওদের জন্য গর্ববোধ করি। রবিবার দেশের ইতিহাসে ব্ল্যাক সানডে। ওরা শুধু সাসপেন্ড করেই ক্ষান্ত হয়নি। আবার নিন্দা প্রস্তাব এনেছে। দেশের মানুষের জন্য প্রতিবাদ করতে গিয়েছে। তার জন্য নিন্দা প্রস্তাব!
অনেকে মনে করছেন কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের ঘাড় থেকে কৃষকদের দায় ঝেড়ে ফেলতেই এই বিল পাশ করিয়েছে। কৃষকদের ফসল মুক্ত বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করলে এখানে পুঁজিপতিরা ঢুকে পড়বে। তাঁরা কৃষকদের দিয়ে শুধু নিজেদের লাভজনক ফসল ফলাবে। তাতে তাঁরা লাভবান হলেও কৃষকরা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যাবে। অর্থাৎ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সেই নীলকর সাহেবদের ঘটনা।