জাতীয় শিক্ষানীতিতে ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি–রাজ্যপালদের সঙ্গে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এই সভায় উপস্থিতি ছিলেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালগুলির উপাচার্য এবং অন্য সরকারি অধিকারিকরা। সুতরাং এদিনের এই সভা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বলবৎ করার স্বপক্ষে এদিন যুক্তি দেন মোদী। এদিন প্রধানমন্ত্রী সরকারের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে নয়া শিক্ষানীতি বলবৎ করার সপক্ষে যুক্তি দেন। তাঁর বক্তব্য, আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে সাহায্য করবে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি। পড়ুয়াদের উপর অযথা চাপ তৈরি না করে কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য তাদের তৈরি করা হবে? তার সরল উত্তর রয়েছে নয়া শিক্ষানীতিতে। এছাড়া প্র্যাকটিক্যাল বা হাতেকলমে শিক্ষার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে নয়া নীতিতে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার। এই বিষয়ে রাজ্য–কেন্দ্রীয় সরকার জড়িত থাকে। তবে শিক্ষানীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ অত্যন্ত কম হওয়া উচিত। আজ কে সরকারে আছে বা কাল মসনদে কে থাকবে, সেই বিষয়টির প্রভাব শিক্ষানীতিতে পড়া কাম্য নয়। এটা সরকারের শিক্ষানীতি নয়। এটা দেশের শিক্ষানীতি।’
বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি করার পক্ষেও সওয়াল করেন প্রধানমন্ত্রী। নয়া নীতিতে শিক্ষার অধিকারের আওতায় আনা হয়েছে ৩ থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়াদের। পাশাপাশি বদল ঘটানো হল পরীক্ষা ব্যবস্থায়। এমনকী আমূল বদলে গিয়েছে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাও। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, নয়া নীতিতে শিক্ষাব্যবস্থা কুক্ষিগত করেছে কেন্দ্র বলে বিরোধীরা যে অভিযোগ করেছেন, আজ তারই জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন দেখার রাজ্য কিভাবে সেটাকে কাজে লাগায়।
উল্লেখ্য, নয়া শিক্ষানীতিতে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নাম বদলে হয়েছে শিক্ষামন্ত্রক। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে গুরুত্বহীন দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের মুখস্থ বিদ্যার বদলে হাতেকলমে শিক্ষায় জোর দেওয়া হবে। প্রতিবছরের বদলে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ। দশম শ্রেণির পর কলা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ বা বাণিজ্য বিভাগের তফাৎ উঠে যাচ্ছে। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়লেও, থাকতে পারে সংগীত। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন নিয়ে পড়লেও, ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়ার সুযোগ। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা/আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষায় ঐচ্ছিক। দ্বাদশ শ্রণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় ৮টি সেমিস্টারের প্রস্তাব। ৫+৩+৩+৪ ভাগে ১৫ বছরের স্কুল স্তরে পড়াশোনা। তার মধ্যে তিন বছর প্রি স্কুল পড়াশোনার সুপারিশ। স্নাতক স্তরে অনার্স কোর্স ৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রতি বছরের শেষে পড়ুয়ারা পাবেন সার্টিফিকেট। কোর্স শুরুর ১২ মাসের মধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে পড়ুয়া পাবেন ভোকেশনাল কোর্সের সার্টিফিকেট। দু’বছর বা ২৪ মাস পর ছাড়লে মিলবে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট। আর চার বছরের কোর্স করলে পাওয়া যাবে ডিগ্রি কোর্সের সার্টিফিকেট। ফলে চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। ১ অথবা ২ বছরে স্নাতকোত্তরের সুপারিশ। উঠে যাচ্ছে এমফিল।
