সূত্রের খবর ছিল, গায়েব হয়ে গিয়েছিল মোট ১৮টি আগ্নেয়াস্ত্র। তার মধ্যে একটি উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে লালগড় থানার মালখানা থেকে পর্যায়ক্রমে পাচার হওয়া বিভিন্ন ধরনের বাকি ১৭টি বন্দুক কোথায় গেল? এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই সন্দেহ শুরু হয় গোয়েন্দাদের। বাঘের ঘরে ঘোঘের ভাষা নাকি চোরের ওপর বাটপারি!
সূত্রের খবর, গত জানুয়ারি মাসে ওই অস্ত্র–পাচার কাণ্ড সামনে আসা ইস্তক সন্দেহটা গোড়া থেকেই হয়েছিল গোয়েন্দাদের। বুধবার রাতে এক আন্তঃরাজ্য অস্ত্র কারবারিকে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) গোয়েন্দারা। তারপরই নিশ্চিত হওয়া যায় মালখানা থেকে চুরি যাচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র। এমনকী লালগড় থানার মালখানা থেকে এক সাব–ইনস্পেক্টরের মাধ্যমে সরানো ওই ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছেছে মাওবাদীদের হাতে!
কিভাবে সামনে এল ঘটনা? পুলিশ সূত্রে খবর, পুরুলিয়ার কেন্দা এলাকায় এই বছর ১২ জানুয়ারি বেআইনি অস্ত্রের কারবারি চণ্ডী কর্মকার গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই অস্ত্র–পাচার কাণ্ড সামনে আসে। একটি গাড়িতে চণ্ডী একটি দোনলা বন্দুক নিয়ে যাচ্ছিলেন পাচার করতে। ওই গাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হওয়ার পর দেখা যায়, সেটি লালগড় থানার সেফ কাস্টডির বন্দুক। বাঁকুড়ায় চণ্ডীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া যায় একটি ট্রানজিট লাইসেন্স। চণ্ডীকে নথি দিয়েছিলেন লালগড় থানার এক সময়কার এসআই, মালখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তারাপদ টুডু। তারাপদকেও এসটিএফ গ্রেপ্তার করেছে।
এখান থেকে স্পষ্ট কত বড় একটা চক্র কাজ করছিল। সম্প্রতি তদন্তকারীরা জানতে পারে, চণ্ডীর কাছ থেকে লালগড় থানার মালখানায় রাখা অস্ত্রগুলি কিনেছিলেন ঝাড়খণ্ডের অস্ত্র কারবারি চিরঞ্জীবী। যেদিন চণ্ডী অস্ত্র–সহ ধরা পড়ে, সেই ১২ জানুয়ারিও চিরঞ্জীবীকে দোনলা বন্দুকটি তাঁর পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। অস্ত্র কেনার পর চিরঞ্জীবী সেগুলি আরও চড়া দামে বিক্রি করে মাওবাদীদের কাছে। ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় একটা মোটা টাকার লেনদেন ছিল। এমনকী এই টাকা সর্বস্তরে পৌঁছেছিল। সেক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল।
