Last cyclone Amphan detroyed mango forest in West Bengal.So this year mango will not be availabl in market.
পরিবেশ ব্রেকিং নিউজ

উম্পুন হারিয়ে দিল বাংলার আমকে

কয়েকদিন আগে বাংলার বেশ কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উম্পুনের ক্ষত  এখনও দগদগে। শহর ও মফস্বল এলাকায় গাছ পরে বিদ্যুতের খুঁটি, বাড়ির পাঁচিল ভেঙেছে, সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে রাস্তা। আর সুন্দরবনের মানুষের জীবন জীবিকা দুইই ভেসে গেছে। কিন্তু এর বাইরেও এক স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে, যা বাংলার তথা বাঙ্গালীর নিজস্ব পরিচয়কেই প্রায় মুছে দিতে চলেছে।

ভারতের জাতীয় ফল এবং অবশ্যই সব বাঙালীর প্রিয় ফল আম এবার আর খেতে পাওয়া যাবে না। বিভিন্ন উম্পুন-বিধ্বস্ত এলাকায় কোন আম গাছই আর আস্ত নেই। তার অন্যতম কারণ আম গাছের ডাল অপেক্ষাকৃত নরম। তার উপর এই সময়টায় গাছে আম ছিল ভরা। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসার অপেক্ষায়। ফলে এই ঝড়ে আম তো পড়ে গেছেই, অধিকাংশ গাছও ভেঙে গেছে। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে আম চাষিরা।

মূলত উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত, বনগাঁ, বসিরহাট মহকুমায় এবং নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের আমের চাহিদা বাংলা ও বাংলার বাইরে সবচেয়ে বেশি। তার মূল কারণ এখানকার বিভিন্ন প্রজাতির আমের স্বাদ। এবারের ঝড়ে এই অঞ্চলেরই ক্ষতি হয়েছে বেশি। চাষিরা বাগানের মালিকদের কাছ থেকে এই বাগানগুলি লিজ নেয়। এলাকা অনুযায়ী একেকটা বাগান প্রায় ১০ থেকে ২০ বা ২৫ লাখ টাকায় লিজ নেওয়া হয়। সমস্ত আম পড়ে যাওয়ায় চাষিরা এই বিপুল পরিমান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বসিরহাটের আটুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খালেক মণ্ডল জানালেন,’ আমাদের প্রায় ২০০ বিঘা আম বাগান লিজ নেওয়া ছিল, সব শেষ। প্রায় ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে গেল। বাগানে আম পড়ে পচে আছে। সরকার না তাকালে আমাদের আর বেঁচে থাকা হবে না।’ একই অবস্থা আপ্তাপউদ্দিন, সেলিম বা জাহাঙ্গীরদের মত জেলার দীর্ঘ দিনের পুরনো আম চাষিদের।

এই সঙ্গে আরেকটি ক্ষতি হয়েছে। যা প্রায় বাংলার আমের ইতিহাসকেই পাল্টে দিতে চলেছে।  এখানে আমের মধ্যে গোলাপখাস, হিমসাগর, ল্যাংড়াই স্বাদের জন্য বিখ্যাত। ফলে এই আমের চাষই বেশি হয়। এখানকার বাগানগুলিতে ৩০ থেকে শুরু করে প্রায় ১০০ বছর বয়সের গাছই বেশি। কারণ সবই এলাকার বহু পুরনো বাগান। এই প্রজাতির গাছগুলিতে আম ধরতে পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত বাগানগুলিতে চাষিরা আম্রপালির মত আম লাগানর কথা ভাবছেন। এই প্রজাতিতে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই ফলন শুরু হয়। তবে কি বাংলা থেকে চিরতরে ক্ষীরশাপাতি, ভুত বোম্বাইয়ের মত হারিয়ে যেতে বসেছে গোলাপখাস, হিমসাগর, ল্যাংড়া? এমনিতেই রঙ ও গন্ধের জন্য বিখ্যাত গোলাপখাস  প্রায় হারিয়ে যাওয়ার মুখেই ছিল। গোবরডাঙ্গার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছিল এই আমের বাগান। কিন্তু বাগান কেটে বসতি তৈরি হওয়ায় প্রায় অবলুপ্তের মুখে চলে গেছে এই আম। ফল ব্যবসায়ী সুকুমার কর্মকার বলেন,’পুরনো গাছ নষ্ট হলে এখন ব্যবসার প্রয়োজনে চাষিরা গুটি আম লাগান যা বড় বড় আচারের কোম্পানিগুলি কিনে নিয়ে যায়। ফলে পুরনো গাছ নষ্ট হলে বিখ্যাত স্বাদের এই আম পাওয়া কঠিন। আর কিছু পাওয়া গেলেও বাজারে আসতে সময় লাগবে।’