কথায় আছে আম নিয়েই আম বাঙালির জীবনযাপন। আসলে বাঙালি আর আম একে অপরের পরিপূরক। তাই যে কোনও প্রজাতির আমে বাঙালির অরুচি নেই। কিন্তু সেই আম যদি হয় মহার্ঘ্য, তবে আম বাঙালির পক্ষে কেনা কষ্টসাধ্য হবেই। আজ এরকমই এক মহার্ঘ্য আমের গল্প বলবো। যা সুদূর আফগানিস্তান থেকে এদেশে এসেছিল কোনও এক সময়। যার নামকরণ হয়েছে মোঘল সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী নূরজাহানের নামে। যেমন নাম, তেমনই তাঁর গুণ। হ্যাঁ, আমি কথা বলছি নূরজাহান আমের বিষয়ে।
আগেই বলেছি, এই আমের বীজ এসেছিল সুদূর আফগানিস্তান থেকে। যা বর্তমানে চাষ হয় কেবলমাত্র গুজরাত-মধ্যপ্রদেশ সীমান্তের আলিরাজপুরের কাট্ঠিওয়াড়া অঞ্চলেই। বিরল প্রজাতির এই আম বিখ্যাত তার ওজন এবং আয়তনের জন্য। এক একটি আমের ওজন ৩ থেকে সাড়ে তিন কেজি পর্যন্ত হয়। লম্বায় প্রায় এক ফুট। ফলে বুঝতেই পারছেন এই বিরল প্রজাতির আম কতটা দামি হতে পারে? দাম শুনলে চোখ যেমন কপালে উঠবে, তেমনই পকেটে টান পড়তেও বাধ্য।
নূরজাহান আম-কে অনেকে কাঠিয়াওয়াড়ি আম বলেও ডাকে। কারণ মধ্যপ্রদেশের এই অঞ্চলেই কেবলমাত্র এই আমের ফলন হয়। ফলে এর চাহিদাও আকাশছোঁয়া। নূরজাহান আম যদি কিনতে হয় তবে পকেটে ৩-৪ হাজার টাকা নিয়ে যেতেই হবে বাজারে। তবে ভাববেন না যে কেজি কেজি আম কিনে বাড়ি ফিরবেন, এই টাকায় দুটি বা তিনটি আম কেনা যাবে। কি ভাবছেন রসিকতা করছি? অজ্ঞে না, নূরজাহান আমের একেকটির দাম ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা হয়। তবে আগেই বলেছি, একেকটি আমই হয়ে যায় প্রায় তিন কেজি ওজনের। ফলে কেউ যদি নূরজাহান আম হাতের কাছে পেয়েও যান, কেনার আগে তাঁকে দশ বার ভাবতে হয় পকেটের কথা চিন্তা করে।
ইতিহাস বলছে প্রায় ১০০ বছর আগে আফগানিস্তান থেকে এই আমের বীজ মধ্যপ্রদেশে চলে এসেছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাট সীমান্তের কাঠিওয়াড়ায় এর চাষ শুরু হয়েছিল। যা হয়ে আসছে। গাছে বোল বা মুকুল আসে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে আর ফলন শুরু হয় এপ্রিল-মে মাস থেকে। আর জুন মাস নাগাদ থেকেই পরিপক্ক নূরজাহান আম বাজারে চলে আসে। এই বিশেষ শ্রেণীর আম খেতে ভীষণই মিষ্টি। এক একটা নূরজাহান আমের আয়তন দৈত্যাকৃতির হলেও, ফলের ভিতরের আঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট।
শিবরাজ সিং চৌহান, ‘নূরজাহান ম্যংগো ফার্ম’-এর মালিক ও মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত নূরজাহান আমের ব্যবসায়ী। তাঁর পূর্বপুরুষ এই আমের চাষ শুরু করলেও তাঁর বাবা এই ম্যাংগো ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁদের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম ফললেও এই নূরজাহান আম সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁদের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম ফললেও এই নূরজাহান আম সর্বশ্রেষ্ঠ। শিবরাজের কথায়, বর্তমানে তাঁদের বাগানে মোট পাঁচটি নূরজাহান আমের গাছ রয়েছে, ৫০ ফুটের এক একটি নূরজাহান আম গাছের থেকে প্রায় ১০০ টা আম পাওয়া যায়। আয়তন অনুযায়ী একটা আমের দাম পাওয়া বাজারে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর শুধুমাত্র নূরজাহান আম বিক্রি করেই কম করে লাখ লাখ টাকা আয় হয় তাঁদের। শুধু ভারত নয়, লন্ডন-আমেরিকাতেও রফতানি হয় এই নূরজাহান আম।
You must be logged in to post a comment.