করোনায় অমানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল বনগাঁ হাসপাতাল। শুধু তাই নয়, এই ঘটনায় নড়ে গেল গোটা রাজনৈতিক মহল। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দাবি করে চলেছেন রাজ্যে করোনার চিকিৎসা সঠিক পথে চলছে তখন ট্রান্সফার করা এক রোগীর মৃত্যু হল অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার আগেই পড়ে গিয়ে। অভিযোগ, সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন না কেউ। বরং পিপিই কিট পড়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রোগীর মৃত্যু পরখ করল চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালের সামনে ৩০ মিনিট পড়ে থাকল মৃতদেহ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, শনিবার বিকেলে বনগাঁ এলাকার ব্যবসায়ী মাধব নারায়ণ দত্তকে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার পরে করোনা সন্দেহে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তারপরে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতেই কলকাতার কোনও হাসপাতালে রেফার করা হয় তাঁকে। এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল।
কিন্তু স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ উঠছে, অসুস্থ মাধববাবুকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্য তাঁর স্ত্রী আলপনা দত্ত তাঁকে হাসপাতাল থেকে একাই বের করে আনেন। কারণ করোনা সন্দেহে কেউ কাছে ঘেঁষছিল না। এমন আচরণ করা হচ্ছিল যেন তিনি অচ্ছুৎ। তারপরেই মাধববাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন কেউ তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। বরং হাসপাতালের সামনেই পড়ে থাকে দেহ। দীর্ঘক্ষণ পরে এক চিকিৎসক এসে মাধববাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সবাই দাঁড়িয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে যেতে দেখল একজন বৃদ্ধকে। যেখানে বারবার বলা হচ্ছে, লড়াই এখন রোগের সঙ্গে, রোগীর সঙ্গে নয়।
কিন্তু এখনও মানুষকে সচেতন করা যায়নি। করোনা–যোদ্ধা বলে যাঁদের তকমা দেওয়া হচ্ছে তাঁদের আচরণও আজ বেনজির দেখা গেল। মৃতের স্ত্রী আলপনা দত্ত জানান, স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সের তোলার সময়ে কেউ সাহায্য না করার কারণেই তিনি একাই অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার চেষ্টা করছিলেন। তখনই পড়ে যান মাধববাবু এবং মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বনগাঁ হাসপাতাল চত্বরে। এই ঘটনায় বহরমপুরের সাংসদ তথা কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘প্লেগের সময় বিদেশ থেকে একজন মহিলা এসে কিভাবে কাজ করতে হয় দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি সিস্টার নিবেদিতা। আর সেই পুণ্যভূমিতেই এই সরকারের দৌলতে মানুষকে পড়ে পড়ে মরতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের।’