প্রথম আঠারো দিনে এক কোটি। পরের বাইশ দিনে আরও এক কোটি। শনিবার বিকেল চারটে। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে আগত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল দু’কোটি। সরকারের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৯০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন ৬২ লক্ষ মানুষ। ৭ লক্ষ মানুষকে দেওয়া হয়েছে এসসি/এসটি/ওবিসি সার্টিফিকেট। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে ৪ লক্ষ মানুষকে সাহায্য করেছে সরকার।
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেই নামীদামি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে। ফেরানো যাবে না কোনও রোগীকে। খুলতে হবে স্বাস্থ্যসাথীর হেল্প ডেস্ক। এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পকে ঘিরে নবান্নের এই দৃঢ় পদক্ষেপ বিরোধীদের সমালোচনারই জবাব বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষরাও জানিয়ে দিয়েছে—সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা ইতিবাচক। উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পকে ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ তুঙ্গে। এই প্রকল্পে ১০ কোটি মানুষকে কার্ড বিলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাদ যাননি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতা পুরসভার হরিশ চ্যাটার্জি রোডের ওয়ার্ড অফিস জয়হিন্দ ভবনে চলছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে টানা ২২দিন কর্মসূচি চলার পর সংখ্যাটি ছাড়িয়ে গিয়েছে দু’কোটি। এদিন এই সাফল্যকেই ট্যুইটারে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, খাদ্যসাথী, ঐক্যশ্রী, শিক্ষাশ্রী–সহ একাধিক প্রকল্পের সুবিধাও ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে মিলছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়ে রাজ্যবাসীকে চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আপনাকে একজন উপভোক্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হিসেবে করতে পেরে ও প্রকল্পের অধীন পরিষেবা আপনাকে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি, আগামীদিনেও এই প্রকল্পের যাবতীয় সুযোগ–সুবিধা প্রদান করে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সামগ্রিক মানোন্নয়নে আরও বেশি করে সামিল হওয়ার সুযোগ পাব। এবার টুইট করে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকলে মিলবে পাঁচ লক্ষ টাকার ক্যাশলেশ চিকিৎসা পরিষেবা। রাজ্যের এই প্রকল্পকে ঘিরে সমালোচনাও থেমে নেই। বিরোধীদের অভিযোগ, কার্ড দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। তার আগেও এই ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল নবান্ন। তারই সূত্র ধরে এদিন ফের ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। সেখানে হাসপাতাল, নার্সিংহোমের প্রতিনিধিরা ছাড়াও জেলাশাসক, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা ছিলেন। সূত্রের খবর, বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা অভাব অভিযোগের কথা মুখ্যসচিবকে জানিয়েছেন। সরকারের তরফে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে একটা কথা পরিস্কার করে দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই হবে। কোনও রোগীকে যেন ফেরানো না হয়।