রাজ্য

৫ মে রাজভবনে শপথ

এই লড়াই শুধু বাংলার সম্মান রক্ষার নয়, দেশকে বাঁচানোরও। নির্বাচনী প্রচারে এই কথা বারবার মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর বলেছেন, ‘বাংলার লড়াইয়ে জিতেই নজর দেব দিল্লির দিকে।’ ২৯২টি আসনের ভোট গণনা শুরু হয়েছিল রবিবার সকালে। তারপর বেলা যত গড়িয়েছে, কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট লাগোয়া নিস্তরঙ্গ আদি গঙ্গায় যেন ঢেউ উঠেছে… জয়ের। শাঁখ আর উলুধ্বনিতে মুখরিত গোটা পাড়া। রাস্তা ঢেকেছে সবুজ আবিরে। আর তখনই এল অপ্রত্যাশিত খবরটা। নন্দীগ্রামের। জয় ঘোষণার পরই টুইটারে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারি লিখেছেন, ‘‌আমার উপর বিশ্বাস ও ভরসা রাখার জন্য নন্দীগ্রামের প্রতিটি মানুষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই জয় নন্দীগ্রামে প্রতিটি মানুষের জয়। আগামী দিনে নন্দীগ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করাই আমার সংকল্প।’‌
তাই উচ্ছ্বাসের মধ্যেও কঠিন শুনিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলা। বলেছেন, ‘ওখানে ভোট লুট হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছে। তিন ঘণ্টা কারসাজি হয়েছে। নন্দীগ্রামের আন্দোলনে ছিলাম, মানুষের পাশে থাকতে চেয়েছিলাম, মানুষের রায়কে মাথা পেতে নিলাম। এবার ভোটে যেরকম স্বেচ্ছাচারিতা দেখলাম, তার একটা বিহিত হওয়ার দরকার। তাই সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাচ্ছি। অবসরপ্রাপ্তরা কমিশন চালাবে।’
ওই মঞ্চেই সাদামাটা আটপৌরে শাড়ি পরে একগাল হাসি নিয়ে উপস্থিত হলেন ‘গেরুয়া–মর্দিনী’—মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে টিম মমতার অন্যতম সেনানী অভিষেক, দুই বিশ্বস্ত সহচর ববি হাকিম এবং অরূপ বিশ্বাস। মাইক হাতে নিয়ে প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানালেন গোটা বাংলার মানুষকে। বললেন, ‘বাংলা গোটা দেশকে বাঁচিয়ে দিল। অপদার্থতা, অপশাসন, মেরুকরণ আর বিভেদের বিরুদ্ধে এই লড়াই জিতে বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাল।’
এরপরই বিরক্তি প্রকাশ বাংলার তৃতীয়বারের মুখ্যমন্ত্রীর। ‘কীভাবে লড়াই করেছি আমরা, বহিরাগত, অর্থবল, এজেন্সি, এমনকী নির্বাচন কমিশন! কী খারাপ ব্যবহার করেছে কমিশন। মানুষ তার যোগ্য জবাব দিয়েছে।’ সেই সঙ্গে বাংলার জনতা জনার্দনের কাছে চিরাচরিত ভঙ্গিতে তাঁর বিনতি—আমার মাথা নত করে দাও হে, তোমার চরণ ধূলার তলে। আমাদের দলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দুটো স্লোগান তৈরি করেছিল, একটা—খেলা হবে। আর একটা—জয় বাংলা। সত্যি খেলা হয়েছে!’
ঘোষণা করেছেন, করোনার কারণে কোনও বিজয় মিছিল, কোনও বিজয় উৎসব নয়। এই বিপুল জয়ের পরেও নিজের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে কাটছাঁট করছেন তৃণমূলনেত্রী। আজ, সোমবার সন্ধ্যায় সাতটায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকারের সঙ্গে দেখা করে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গড়ার দাবি জানাবেন। দলীয় সূত্রের খবর, সম্ভবত আগামী ৫ মে রাজভবনে শপথ নেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।