দেশ লিড নিউজ

গান্ধীগিরিতেই বাজিমাত, পাদদেশে একা মমতা

প্রতিবাদে তিনি একা, অবিচল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক দূরত্বের হোক বা নৈকট্যের, এই কথা মানতে দ্বিধা করেন না কেউই। মঙ্গলবারও তার অন্যথা হল না। একা, কোনও দলীয় পতাকা ছাড়া ধর্নায় বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে ধর্ণায় বসলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও এই নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রের খবর, এই ধর্ণার জন্য এখনও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও অনুমোদন মেলেনি। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ধর্ণায় অনুমতি পত্র পৌঁছয় সেনাবাহিনীর কাছে।
কয়েকদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর ঘেরাও মন্তব্যের জন্য শো–কজ করেছিল নির্বাচন কমিশন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার উত্তরও দেন। কিন্তু উত্তরে খুশি না হয়ে প্ররোচনার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে কমিশন। ২৪ ঘণ্টার জন্য তাঁর প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। এই ঘটনার বিরুদ্ধে কার্যত প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তৃণমূল ব্রিগেড। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই ঘটনাকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলে ট্যুইট করেন। সেখানেই থেমে থাকেননি। তিনি ধর্ণায় বসার সিদ্ধান্ত নেন এবং জানান নিষেধাজ্ঞা উঠলে যত রাতই হোক সভা করবেন।
এদিন দেখা গেল, ধর্ণা মঞ্চে ছবি আঁকার জন্য রং–তুলি এনেছেন মমতা। ধর্ণায় বসেই ছবি আঁকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। পঞ্চম দফার ভোটের আগেই নাটকীয় মোড় রাজ্য–রাজনীতিতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার কর্মসূচিতে ২৪ ঘণ্টার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কমিশন। প্ররোচনামূলক মন্তব্যের জেরে তাঁকে দু’‌বার নোটিশ ধরানো হয়। কিন্তু সেই নোটিশের জবাবে সন্তোষজনক যুক্তি না মেলায় তাঁর উপর এই নিষেধাজ্ঞা বলে জানাচ্ছে কমিশন। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না মমতা। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই ধর্ণার ঘোষণা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে তিনি ধর্নায় বসলেন সম্পূর্ণ একা। কোনও পতাকা ব্যানার ছাড়া তৈরি হল অনন্য এক স্পেকট্যাকেল। বাইরে অপেক্ষমান হাজার হাজার ত়ৃণমূল সমর্থক। নিষেধাজ্ঞা উঠলেই বারাসাতে সন্ধ্যে সাড়ে আটটায় তিনি সভা করবেন তৃণমূল প্রার্থী চিরঞ্জিতের সমর্থনে। সেখান থেকে আসবেন উল্টোডাঙায়। দলীয় প্রার্থী সুজিত বসুর সমর্থনে সভা করবেন তিনি।
উল্লেখ্য, সিঙ্গুর–নন্দীগ্রাম, প্রতিবাদের ধরনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যান। ৯০ এর দশকে ফুলিয়ার মূক বধির মেয়ের ধর্ষণের প্রতিবাদে মহাকরণের অলিন্দে ঢুকেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। চুলের মুঠি ধরে তাঁকে বের করে দেওয়ার দৃশ্য সব সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছিল। আজকের ভাষায় বললে ভাইরাল হয়েছিল। সিঙ্গুরে ২৬ দিনের অনশন হোক বা রাজীবের সিবিআই–গ্রেফতারি রুখতে সান্ধ্য ধর্ণা, মমতার নজিরবিহীন প্রতিবাদের তালিকা সুদীর্ঘ। এদিনও ‌বিষয়টা তেমন হল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একঘরে হওয়ার পরিবর্তে প্রচারের পুরো আলোটাই শুষে নিলেন। তিনি একা হুইলচেয়ারে বসে রয়েছেন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে। এই গান্ধীগিরি সর্বভারতীয় স্তরেই একটি জনসভার থেকে অনেক বেশি প্রচার দেবে তাঁকে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।