করোনা সংক্রমণের সব রেকর্ড ভেঙে গেল বাংলায়। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮৬ জন। অর্থাৎ আনলক পর্বে গোটা দেশের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বাংলাতেও। তাই করোনার এই বাড়বাড়ন্তে লাগাম দিতে বাংলায় ফের একবার লকডাউন ফিরিয়ে এনেছে রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সেই লকডাউন। বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন আপাতত লকডাউন চলবে সাতদিন। কিন্তু কিভাবে, কিসের ভিত্তিতে হবে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকায় রাজ্যের মানুষের কাছে এই লকডাউন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছে কনটেইনমেন্ট জোনে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি জায়গায় ছোট ছোট করে কনটেইনমেন্ট জোন করা হয়েছে। তবে বাফার জোন মিলিয়ে কনটেইনমেন্ট। করোনা সংক্রমণ রুখতে আরও সতর্ক থাকতে হবে। আর সেখানেই থাকবে লকডাউন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, কারও বাড়ি যদি কনটেইনমেন্ট জোনে না হয় আর অফিস কনটেইনমেন্ট জোনে পড়ে তাহলে তিনি কী করবেন? আবার বাড়ি ও অফিস কনটেইনমেন্ট জোনের বাইরে, অথচ যাতায়াত করতে হবে কনটেইনমেন্ট জোনের ওপর দিয়ে। তাহলে তিনি কী করবেন?
প্রশাসনের কাছে কোনও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তাই মুখ্যমন্ত্রী জানান, আপাতত সাতদিন এলাকাগুলির উপর কড়া নজর রাখা হবে। সাতদিন পর পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। লকডাউনের মধ্যে সবাই নিজের রাজ্যে ফিরলেও বাংলা ছেড়ে যায়নি কোনও পরিযায়ী শ্রমিক৷ তাঁর দাবি, পশ্চিমবঙ্গ মানুষকে যত্নে রাখে৷ এখন থেকে এ ও বি জোন থেকে কিছু এলাকা নিয়ে ছোট ছোট কনটেইনমেন্ট জোন করা হচ্ছে। রেড জোন ও বাফার জোন মিলিয়ে হচ্ছে কনটেইনমেন্ট জোন। এটারও কোনও ব্যাখ্যা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, এই সাতদিন কনটেইনমেন্ট জোনের কোনও বাসিন্দা খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। মাস্ক ছাড়া কেউই বাড়ির বাইরে বেরোলে তাঁকে পুলিশ ধরবে। অনেকেই মাস্ক পরছেন না। আমি চাইলে জরিমানা করতে পারি। কিন্তু লকডাউনে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তার উপর আমি ২০০০ টাকা করে জরিমানা নিলে সেটা কি ভালো হবে? কিন্তু প্রশাসনিক স্তর এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য ছিল, তার মেয়াদ ন্যূনতম ১৪ দিনের কম নয়। নবান্ন থেকে সব জেলা প্রশাসনকেই বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে কনটেইনমেন্ট জোনের নতুন সংখ্যা নির্ধারণ ও এলাকা চিহ্নিতকরণের জন্য। ওই সব এলাকায় বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হবে লকডাউন। আর মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দিলেন আপাতত সাতদিনের লকডাউন। পরিস্থিতি বুঝে ফের তা বাড়ানো হতে পারে।
সম্প্রতি দেখা যায়, কলকাতা তো বটেই, লাগোয়া তিনটি জেলাতেও (হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনা) নির্দিষ্ট কিছু তল্লাটে বিপুল সংখ্যায় করোনা পজিটিভের খোঁজ মিলছে। ওই সব মহল্লা কার্যত গোষ্ঠী সংক্রমণের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে আনলক করার প্রয়োজন কী ছিল? আবার লকডাউন করতে হল কেন? তাও আবার কনটেইনমেন্ট জোনে। সব মিলিয়ে একটা বিভ্রান্তিতে ভুগছে জনগণ।