অধিকারী পরিবারের উপস্থিতি ছাড়া এই প্রথম নন্দীগ্রামের মাটিতে সভা করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মাঠে নেমেই দিলেন মাস্টারস্ট্রোক। যা ভাবতেও পারেনি অধিকারী পরিবারের কেউ। এমনকী কার্যত চাপে ফেলে দিলেন অধিকারীদের। কারণ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তৃণমূলনেত্রী। সুতরাং সব অঙ্ক গুলিয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন জনসভা শুরুতেই তিনি বলেন, ‘ভবানীপুরের মানুষকেও আমি কষ্ট দেব না। ম্যানেজ করতে পারলে নন্দীগ্রাম ও ভবানীপুর দুই জায়গা থেকেই আমি দাঁড়াব। নন্দীগ্রামে আমি দাঁড়াবই।’ সোমবার নন্দীগ্রামের তেখালি বাজার মাঠ সভাস্থলে পৌঁছেই সভা শুরুর আগে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারের হাতে তুলে দিলেন আর্থিক সাহায্য। এদিন নন্দীগ্রামে রওনা হওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে আমি রোজই যাই। আমার মনে নন্দীগ্রাম রোজই থাকে।’
এরপরই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমি যদি নন্দীগ্রামে ভোটে দাঁড়াই, কেমন হয়? নন্দীগ্রাম থেকেই ২০২১ সালে জেতার পালা শুরু হল। নন্দীগ্রামের শহিদদের কোনওদিন ভুলিনি, ভুলব না। অত্যাচার, অনাচারকে সহ্য করে যেভাবে আপনার আন্দোলন করেছিলেন, তার কোনও তুলনা হয় না। এটা আমার আবেগের জায়গা। ভবানীপুরকেও আমি নেগলেক্ট করছি না। ওটাও আমার আবেগের জায়গা। ওখানেও ভালো প্রার্থী দেব। তবে সুব্রত বক্সীকে বলব, নন্দীগ্রামে আমার নামটা চূড়ান্ত করে দিতে।’
এরপরই তিনি জানান, নন্দীগ্রামে নিখোঁজ ও শহিদ পরিবারকে পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। নন্দীগ্রামে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করা হয়েছে। চণ্ডীপুর ও নন্দকুমার ব্লকে ৭০ হাজার পরিবারে বাড়ি বাড়ি জলের কল পৌঁছতে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প করা হয়েছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলন যখন হয়েছিল তখন প্রায় ১০ জন নিখোঁজ ছিলেন। ১৪ মার্চ অনেকে মারা গিয়েছিলেন। তা ছাড়া নভেম্বর মাসে সূর্যোদয়ের নাম করে ১০ জন মানুষ আজও ফিরে আসেনি। সেই মানুষগুলোর পরিবারের হাতে ৪ লক্ষ টাকা করে অনুদান দিচ্ছি। আজকের এই মঞ্চ সরকারি মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকে ৪ লাখ টাকা করে সরকারি সাহায্যের চেক তুলে দেওয়া হচ্ছে সেই নিখোঁজদের পরিবারের হাতে।
এরপর নাম না করে অধিকারী পরিবার ও বিজেপিকে তুলোধনা করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘যা চেয়েছে সব দিয়েছি। আমি চাই ওরা ভালো থাক, সুস্থ থাক। ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী হোক। আগে আমাকে দেখতে দিত না। আমি টাকা দিতাম। আর ওরা বলত, ওরা কাজ করছে। এবার থেকে আমি নিজেই দেখব। নন্দীগ্রাম আমার জন্য লাকি জায়গা। আজ নন্দীগ্রাম থেকে আমি ঘোষণা করছি, ২০২১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস জিতবে। নন্দীগ্রামের সাথে আমার আত্মার টান, যা চিরকাল ছিল, থাকবে।’