কেন্দ্রের আর্থিক প্যাকেজের পর এবার রাজ্যের প্যাকেজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। একইসঙ্গে কেন্দ্রের প্যাকেজকে বিগ জিরো বলে তোপ দাগলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন, ‘বিগ জিরো, কাল যে কথা বলা হয়েছিল, তাতে রাজ্যগুলো হয়ত কিছু পাবে। রাজ্যের সার্বিক উন্নতিতে যা কাজে আসবে। বাস্তবে অশ্বডিম্ব দেখতে পেলাম।’ তিনি জানান, করোনার জেরে লকডাউন চলছে। তবে এখনও রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের ঠিক সময়ে বেতন দেওয়া হচ্ছে। ২০২০–২০২১ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪২০০ টাকা বোনাস দেওয়া হবে।
মোদীর ঘোষিত প্যাকেজ যে আদৌ ২০ লাখ কোটির নয় বাস্তবে তা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৪ লাখ কোটির মতো। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আগে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রই স্পষ্ট করে দিয়ে জানিয়েছেন, যা দাঁড়াচ্ছে তাতে ঘোষণা মতো জিডিপির ১০ শতাংশ তো নয়, বড়জোড় ২ শতাংশ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দশ লক্ষ কোটি টাকা অলরেডি ঘোষণা ছিলই, কিচ্ছু দেয়নি রাজ্যগুলোকে, চলবে কী করে? আমরাই তো বাংলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি।’
এই বছর বোনাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বেতনের ঊর্ধসীমা ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪,২৫০ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৩৪,২৫০ টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন তাঁরা সবাই এই বোনাস পাবেন। ফলে ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে। কেন্দ্রের প্যাকেজকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে কটাক্ষ করে মমতার তোপ, ‘সাধারণ মানুষকে তো নগদ টাকা দিতে পারতেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কিছু নেই, চাকরি তৈরি করা, স্বাস্থ্য–বাজার, করোনা মোকাবিলায় কিছু নেই। কিচ্ছু নেই এই প্যাকেজে। ধোঁকা দেওয়া হল মানুষের দুর্দিনে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে রাজ্যের জন্যে ঋণের ব্যবস্থাও তো করা যেত। কৃষকদের ঋণ মকুব করতে পারতেন। শূন্য থালি নিয়ে পেটের ভাত ভরবে?’
যাঁদের বেতন বেশি, যাঁরা বোনাস পান না, তাঁদের জন্যও অগ্রিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩৪,২৫০–এর পর থেকে ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন, সেইসব রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হবে। এটা পরে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। এখন ইদের সময় মুসলিম কর্মীদের ও পরে দুর্গাপুজোর সময় হিন্দু কর্মীদের এই বোনাস ও অগ্রিম দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ভুয়ো তথ্য দেওয়া হল, ইনকাম ট্যাক্সের সময় বাড়ালাম—এটা তে কী হয়? একটাও পয়সাও দেওয়া হল না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করা হল, লকডাউনের নামে রাজ্যগুলোকে লকআউট করে দিল। গণতন্ত্র থমকে গিয়েছে। মানুষের বাঁচার অধিকার থমকে গিয়েছে। আমরা এখনও ১০০% বেতন দিয়ে যাচ্ছি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন দাবি করেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ আসলে অশ্বডিম্ব। কেন্দ্রের ঘোষণা আসলে বিগ জিরো। এই প্যাকেজের ১০ লাখ কোটি আগেই ঘোষিত। এমএসএমই–তে কিছু দেয়নি। করোনা মোকাবিলায় কোনও ঘোষণা নেই। কৃষক ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্যও কোনও ঘোষণা নেই। মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। দুর্ভোগের সময় এটা আইওয়াশ কেন্দ্রের।’