দেশ লিড নিউজ

ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে ছক তৃণমূল কংগ্রেস–বিজেপির

এবার বাংলায় কী ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হতে চলেছে? দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগে রাজ্য–রাজনীতিতে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ‌ পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দফার ভোট শেষ হতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিলেন, প্রথম পর্বের ৩০টি আসনের মধ্যে ২৬টি তাঁদের পাওয়া হয়ে গিয়েছে। মোট আসন নাকি ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। আবার খোদ নন্দীগ্রামে জিততে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালঘাম ছুটে যাবে তা একে ওকে ফোন করা থেকেই স্পষ্ট। তিনিও বুঝতে পারছেন, প্রত্যাশামতো ফল হবে না। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ওপর তাঁকে নির্ভর করতে হবে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, নির্বাচন–পরবর্তী পরিস্থিতি কী হতে পারে সেটা অনুমান করে নিয়ে দলীয় পর্যায়ে প্রস্তুতি চলছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে নন্দীগ্রামে গুলিচালনা নিয়ে বিবৃতি দিতে হল। ২০০৭ সালের সেই ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির মূল সুরটি বাঁধা হয়ে গিয়েছিল। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের আন্দোলন বিশেষজ্ঞদের গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ভারত সরকার জমিনীতিকে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে কৃষকদের জন্য‌ নিরাপত্তার ব্য‌বস্থার স্বীকৃতি দিয়ে নতুন আইন প্রবর্তন করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার করেছিলেন বামেরা এতটাই বিদেশি পুঁজির দালালে পরিণত হয়েছে, যে কৃষকদের হত্যা করতে হাত কাঁপে না। কিন্তু রবিবার বিরুলিয়া বাজারের প্রচারসভা থেকে মমতা পরিষ্কার বললেন, বাম সরকার গুলি চালায়নি। অধিকারী পরিবারের পরিচালনায় তাঁদেরই মদতপুষ্ট ‘চটি পরা’ পুলিশ গুলি চালিয়েছে। পালটা শিশির অধিকারীও জানিয়েছেন, পুলিশের সঙ্গে মিলে ছক কষেছিলেন মমতা স্বয়ং।
অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য়কে দিয়ে এই ব্যাপারে বিবৃতি দেওয়ানো হয়েছে। একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে মমতা নিজেই তাঁর এত দিনের রাজনীতিকে অনেকটা লঘু হতে দিলেন। সিপিআইএম তাঁর করে দেওয়া জমিটা ব্য‌বহার করছে মাত্র। কিন্তু কেন? ঝুলন্ত বিধানসভায় লক্ষ্যমাত্রার কাছে পৌঁছলেও সরকার বাঁচাতে তাঁকে সংযুক্ত মোর্চার ওপর নির্ভর করতে হবে। তারা যদি সরাসরি সমর্থন না দিয়েও এমনটা একটা কৌশল নেয় যাতে কোনওমতেই বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসীন হতে না পারে তা হলেই তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস সরকার টিকে যেতে পারবে। তাই মমতা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বুদ্ধদেববাবুর সরকারকে ক্লিনচিট দিলেন।
অন্য‌দিকে বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করা যে সব নেতা জিতে আসবেন তাঁদের ওপর গোষ্ঠীগত ভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাতে বিজেপির পক্ষে আনা যায় সেটাই হল আসল উদ্দেশ্য‌। মতুয়া, রাজবংশী, কোচ, পীরের অনুগামী, আদিবাসী সম্প্রদায়, অনুন্নত সম্প্রদায়ের প্রার্থীরাই তাদের টার্গেট। খুব সম্ভবত আগামী পর্বের নির্বাচনের আগে তারা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের কোনও নেতাকে সামনে এনে বাজিমাত করার চেষ্টা চালাবে।