আজ মহাসপ্তমী। তবে সপ্তমীর চেনা ছন্দের রাজপথ এবার দেখা যাবে না। কারণ মানুষ আজ রাস্তায় রাস্তায় নামবে না। আবার যাদের ইচ্ছে আছে তারা নামতে পারবে না লোকাল ট্রেন চলছে না বলে। আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের রায়—পুজোমণ্ডপ রাখতে হবে দর্শকশূন্য। এই বছর উৎসবের পার্বণ চললেও মানুষের মনে রয়েছে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হলেও কেউ পুজো সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছেন না, হচ্ছে না অঞ্জলিও।
বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবের দিনগুলি আর হেঁটে নয় এই বছর সকলকে নেটেই কাটাতে হচ্ছে। হাইকোর্টের নির্দেশমতো কেউ মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারছেন না এবং শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে পুজোর সব কাজ করতে হচ্ছে। হাইকোর্টের রায়কে সম্মান জানিয়ে এবার পুজোর উদ্যোক্তারাও সব কিছু করছেন। উত্তর কলকাতার অন্যতম বারোয়ারি পুজো কাশীবোস লেন সর্বজনীন পুজো কমিটি সূত্রে খবর, এই বছর তাঁদের থিম ‘দেবীঘট’। দর্শনার্থীদের দেবীপ্রতিমা দর্শন করতে হবে ভার্চুয়ালি।
এই বছর কাশীবোস লেনে সিঁদুরখেলা হচ্ছে না এবং যে সমস্ত মহিলা দেবীকে বরণ করতে আসবেন তাঁরা দূর থেকে মাকে বরণ করে চলে যাবেন। অর্থাৎ উত্তরের কাশীবোস লেন সর্বজনীনের পুজো এবার নানান বিধিনিষেধের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হাতিবাগান সর্বজনীন পুজো কমিটির এক কর্তা জানালেন, তাঁদের পুজোতেও রয়েছে নানা সুরক্ষাবিধি এবং তাঁরাও হাইকোর্টের নিয়ম মেনেই পুজো করছেন। মণ্ডপে প্রবেশের অধিকার নেই সাধারণের।
হাতিবাগান সর্বজনীনের থিম ‘অসমাপ্ত’, অর্থাৎ করোনাভাইরাসের প্রভাবে পরিকল্পনা অনেকটাই বাস্তবায়িত করা গেল না। তাই নাম ‘অসমাপ্ত’। নলীন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব এই বছর ৮৮তম বর্ষে পদার্পণ করল। এখানকার এক কর্তা জানান, এই বছর তাঁদের পুজোর থিম ‘পুজো এবার কাঠামোতে’, অর্থাৎ মহামারির সঙ্কটের সময়ে বিগ্রহ সম্পূর্ণ করে উঠতে পারেননি শিল্পী। উত্তর কলকাতার আরও একটি জনপ্রিয় বারোয়ারি পুজো হল ‘নর্থ ত্রিধারা সর্বজনীন’। তাঁদের ভাবনা ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’। অর্থাৎ কোভিড থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা যাঁরা করছেন তাঁদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে নর্থ ত্রিধারা পুজো কমিটি।
কলকাতার তৃতীয় প্রাচীনতম বারোয়ারি পুজো হল সিকদারবাগান সর্বজনীন। পুজো কমিটি সূত্রে খবর, এই বছর তাঁদের থিম ‘উৎসব’। এবার সকলের মধ্যে প্রশ্ন হতেই পারে যে করোনাভাইরাসে উৎসব কিভাবে সম্ভব? তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যাই হোক, মানুষের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগই বড় কথা। এই আত্মিক যোগাযোগই তো ‘উৎসব’। সাধারণ মানুষকে দূর থেকেই দেখতে হবে পুজো এবং এই বছর কোনও ভোগ বিতরণ হচ্ছে না সিকদার বাগান সর্বজনীনের পুজোমণ্ডপ থেকে।