রাজ্য

জঙ্গলে মাফিয়ারাজ ঠেকাতে প্রস্তুত রাজ্যের বনদপ্তর

জঙ্গলের গাছ চুরি, কাঠের চোরাচালান রুখতে এবার থেকে দিনে পাঁচবার ই-অকশন করার সিদ্ধান্ত নিল বনদপ্তর। এতদিন মাসে একবার বা দু’বার জঙ্গলে অকশন করা হতো। তাতে যাদের প্রয়োজন, তারা অনেকেই কাঠ কিনতে পারতেন না। বেশিরভাগটাই চলে যেত কাঠ মাফিয়াদের হাতে। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‌চলতি মাস থেকে ই-অকশন শুরু করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ৭০০টি কেন্দ্র থেকে ই-অকশন করা হবে। কেউ ঝাড়গ্রাম থেকে কাঠ কিনতে চাইলে সেখানে নির্দিষ্ট অর্থ জমা দিয়ে ই-অকশনে অংশ নিতে পারবেন। লাটাগুড়িতে বনদপ্তরের হেফাজতে থাকা কাঠ ই-অকশনে কিনতে পারবেন। গাছ চুরি এবং কাঠের চোরাচালান বন্ধ করতে এই ব্যবস্থা।’‌

বনদপ্তর সূত্রের খবর, শাল, সেগুন, মেহগনি–সহ জঙ্গলের ভিতরে পড়ে থাকা মূল্যবান কাঠ প্রায়শই অকশন করা হয়। কিন্তু এক শ্রেণির কাঠ মাফিয়া ওই ব্যবসা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখেন। তাই এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা কাঠ কিনতে চাইলেও অকশন পদ্ধতির গেরোয় কাঠ মাফিয়াদের কাছে যেতে বাধ্য হন। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে।

মন্ত্রীর কথায়, সেই চক্র আমরা ভাঙতে চাই।
তিনি আরও জানান, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, কংসাবতী সহ বিভিন্ন ডিভিশনের জঙ্গলের কাঠ ই-অকশন করা হবে। সপ্তাহের তিন-চারদিন অকশন করার কথা ভাবা হয়েছে। দিনে পাঁচবার করে ই-অকশন হবে। কেউ একবার মিস করলে যাতে পরে আরও অকশনের সুযোগ নিতে পারেন।

বনদপ্তর সূত্রের খবর, জঙ্গলে অনেক মূল্যবান কাঠ রয়েছে। এর বেশিরভাগ পুরনো গাছ। সেই সব গাছ জঙ্গল থেকে কেটে ফেলে বনদপ্তর। পরে ওই গাছের কাঠ অকশনের জন্য রাখা হয়। তাছাড়া ঝড় বা কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক গাছ পড়ে যায়। তাও চলে যায় অকশনের ভাণ্ডারে। আবার অনেক সময় দুষ্কৃতীরা জঙ্গলের গাছ কাটতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। তারা পালিয়ে গেলেও কাঠ পড়ে থাকে। সেই কাঠ আবার অনেক সময় জঙ্গল থেকেই গায়েব হয়ে যায়। এর পিছনে একাধিক চক্র কাজ করে।

এই বিষয়ে বনমন্ত্রী বলেন, ‘‌জঙ্গল থেকে পুরনো গাছ কাটলে সেই জায়গায় ৫টি নতুন গাছ লাগাতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তার সংরক্ষণে যেন কোনও খামতি না থাকে। সেজন্য জঙ্গলে গাছের সংরক্ষণের পাশাপাশি কাঠ বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে। বনের কাঠ মানেই চুরির জন্য, এই প্রচলিত বাক্য লোকমুখে ঘোরে। এটা ভাঙতে হবে।’‌