বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর দিনই হাওড়ার ডুমুরজোলার সভা থেকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আজকের সভায় বিজেপি কর্মীদের মধ্যে যে উন্মাদনা দেখছি, তাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যে পদ্মফুল ফুটবে। অমিত শাহ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা আমরা পূরণ করব।’ এরপরই তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, শুধু কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া। ঝগড়া করে কেন্দ্রের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারি না। এটা কার ব্যর্থতা? কেন্দ্র ও রাজ্যে এক সরকার চাই। আমরা চাই ডবল ইঞ্জিন সরকার। যা মানুষকে দিশা দেখাতে পারবে।
রবিবাসরীয় বারবেলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, ‘শুনতে পেয়েছি দিদি নাকি নন্দীগ্রাম যাচ্ছেন ভবানীপুর ছেড়ে? তাই শুভেন্দুবাবু বলছেন, হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, দিদিও জানেন বাংলায় পদ্ম এখন ঘরে ঘরে।’ এদিন ডুমুরজলা স্টেডিয়াম থেকে একের পর এক তোপ দাগা হয় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। শুভেন্দু থেকে রাজীব কেউ বাদ যাননি। এটা অবশ্য রাজীবের এলাকা বলে তিনি বাড়তি তোপ দেগেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসে থাকাকালীন যারা কাজ করতে দিচ্ছিল না তাদের লক্ষ্য করেও তোপ দাগা হয়।
এদিন বিজেপিতে যোগ দিলেন বাণী সিংহ রায় (তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি), অনুপম ঘোষ (জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি), পার্থসারথী বসু (বসিরহাট পুরসভা প্রাক্তন চেয়ারম্যান)। এখানে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘কাউকেও কোনও দিন অসম্মান করেনি। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, যতদিন বিজেপিতে থাকব, কোনও দিন কোনও কর্মীকে অপমান–অসম্মান করব না। আমি নেতা হয়েছিলাম, কর্মীদের জন্যই। ফলে তাঁদের সবসময়ই হৃদয়ে রাখব। যখন ওই দলে কেউ যোগ দেয়, তখন বলে উন্নয়নের স্বার্থে যোগ দিয়েছে। আর এখন বিজেপিতে যোগ দিলে বলছে, দুর্নীতি ঢাকতে চলে গিয়েছে। বিশ্বাসঘাতক, গদ্দার। আমি দায়িত্ব নিয়ে এই রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বলে যেতে চাই, আপনারা যত অপমান করবেন, মানুষের আশীর্বাদ ততই আমাদের মাথায় এসে পড়বে।’
প্রাক্তন মন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলার জন্য স্পেশাল অর্থনৈতিক প্যাকেজ চাই। অমিতজিকে বলেছি। অমিতজি আমায় বলেছেন, বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য দরকারে ক্যাম্প করে পড়ে থাকব। ওই দল না করলেই মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা তলানিতে পৌঁছেছে। সংখ্যালঘুদের শুধু ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করে গিয়েছে। কোনও উন্নয়ন হয়নি। এতদিন সরকার মানুষের কাছে যায়নি, তাই ভোটের মুখে এখন দুয়ারে দুয়ারে সরকার। এতদিন কোনও সমস্যার সমাধান করেনি, তাই ভোটের আগে পাড়ায় পাড়ায় সমাধান।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছে সময় আছে, মানুষের কাছে না গিয়ে এই সব অপ্রচার করছেন। আমরা কাল থেকেই মানুষের কাছে যাওয়া শুরু করে দেব। বিজেপি সুযোগ দিলে ২৯৪টা বিধানসভায় পৌঁছে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলব। লড়াইয়ের ময়দানে যখন রয়েছি, তখন কখনই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পথে যাব না। বিরোধী দলের মিটিং–মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে ওরা এখন শেষ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে। ওদের শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে।’
প্রাক্তন বনমন্ত্রী জানান, অমিত শাহ কাল আমাকে বলেছেন, আর ধমকে চমকে ভোট হবে না। আমরাও জানি কীভাবে ভোট করাতে হয়। এতদিন সেই শিক্ষা আমরাও পেয়েছি। এবার মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে ভোট দেবে। শুভেন্দু অধিকারীকে বন্ধু ও সতীর্থ বলে উল্লেখ করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১ সালের নির্বাচনে সারা বাংলায় পদ্ম ফোটাব আমরা। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ, প্রতিশ্রুতি। আর শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘৫০০ বছরের প্রাচীন শহর হাওড়া। যতজন আজ এই ঐতিহ্যশালী স্টেডিয়ামে এসেছেন, তার দ্বিগুণের বেশি রাস্তায় আছেন। গোটা রাস্তা জয় শ্রী রাম শুনতে শুনতে এসেছি। রাজীব আমার বন্ধুপ্রতিম। আমি ও রাজীব ২০০৪ সালে একসঙ্গে লড়াই শুরু করেছিলাম। আমাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল। বাংলার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এক ছিলাম। ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দু এসেছে। এবার রাজীব এল। আজ বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। দিল্লিতে যে সরকার, কলকাতাতেও সেই সরকার করতে হবে। বেকারদের চাকরি দিতে হবে। বাংলায় পরিবর্তন আনতে হবে। আসল পরিবর্তন ২০১১ সালে আসেনি। একুশেই আসল পরিবর্তন হবে।’