জেলা

আলোকশিল্পে এখন বিষাদের সুর

একদা ছিলেন চন্দননগরের দক্ষ আলোকশিল্পী। আচমকা তাঁকেই একদিন মুদিখানা দোকান খুলে বসতে দেখেন স্থানীয়রা। তবে তা কয়েক মাস চলেছিল। যে হাতে আলোকসজ্জা তৈরি করেছিলেন, দায়ে পড়ে সেই হাতে দাঁড়িপাল্লা ধরলেও তা চালাতে পারেননি। ফলে আলোকশিল্পের আখড়া চন্দননগরের রণজিৎ দাস এখন বেকার।
ছোটখাট কারখানা চালাতেন চন্দননগরের শুভজিৎ বেহুরা। এখন কারখানায় গভীর অন্ধকার। আলোর নানা কারসাজি তৈরি যেখানকার পরিচয় ছিল, সেখানে এখন মানুষের পা পড়ে না। জনাদশেক কর্মী ছিল কারখানায়। করোনা আবহে কাজ হারিয়ে তাঁদের কেউ এখন জনমজুর, কেউ আবার মাছ বিক্রেতায় পরিণত হয়েছেন। জমানো টাকা তলানিতে। ফলে ছোট কারখানার মালিকের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। এসব কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

জানা গিয়েছে, আলোকশিল্পীদের ইউনিয়নে প্রায় ২০০ জন মুখ্য শিল্পী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কাজ করেন প্রায় আড়াই হাজার ছোট শিল্পী। এর বাইরেও পৃথকভাবে কাজ করেন আরও বহু মানুষ। প্রতিবছর জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে এই মহল্লায় হই হই পড়ে যায়। এই সময়টায় আলোর নৈপুণ্য দেখানোর প্রতিযোগিতা যেমন থাকে, তেমনই সারা বছরের রোজগারের সময়ও এটা। দুর্গাপুজো ও কালীপুজোকে কেন্দ্র করেও বছরে দু’বার রোজগারের সুযোগ তৈরি হয়। চন্দননগরের আলোর টানে বড় শিল্পীদের পাশাপাশি ছোটশিল্পীরাও বাড়তি কাজ পেয়ে যেতেন। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ টেনেছে করোনা।

জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের গোড়ায় অনেকেই আলোর নানা সরঞ্জাম কিনে ফেলেছিলেন। বায়না না হওয়ায় সেই টাকা ওঠেনি। ফলে টাকা আটকে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। চন্দননগরের বাসিন্দা তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো টেকনোলজির অধ্যাপক অর্ঘ্য অধিকারী বলেন, ‘‌এই মানুষজন যদি রোজগারের অভাবে বিপথে চলে যায়, তখন গেল গেল রব উঠবে। কিন্তু সময় থাকতে তাঁদের এই সঙ্কট নিয়ে কেউ ভাবছে না। একটা ঐহিত্যবাহী শিল্পের নীরব মৃত্যু হচ্ছে।’‌