জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি কোনও অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখেন। সে অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে শাস্তি পেতে হবে, এটাই রীতি। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কথার রেশ ধরেই এক ঐতিহাসিক রায় আসে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত থেকে।
থানায় নিয়ে গিয়ে সেখানে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিন পুলিশকর্মীর যাবজ্জীবন এবং পুলিশের দুই সোর্সের ৭ বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সুতরাং প্রশাসন যে অত্যন্ত কঠিন তার প্রমাণ মিলল এই ঘটনায়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরের নিহত হওয়ার ঘটনায় টেকনাফ থানার ওসি–সহ ৯ জন পুলিশকর্মী এখন কারাগারে রয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল, বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ঢাকার পল্লবী থানায় আনা হয় জনি নামের এক যুবককে। সেখানে অকথ্য নির্যাতনে প্রাণ হারান তিনি। পুলিশ হেপাজতে মৃত্যুর পরেও থেমে থাকেননি এসআই জাহিদ ও তাঁর অপর দুই সহযোগী। অবশেষে তিন পুলিশের যাবজ্জীবন সাজার আদেশ দিয়েছে আদালত।
২০১৩ সালে পুলিশ হেপাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন হয়। সেই আইন প্রণয়নের সাত বছরের মাথায় এই আইনে প্রথম কোনও মামলার রায় ঘোষণা হল। ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর মিরপুর–১১ নম্বর সেকশনে জনির বন্ধুর বিল্লালের গায়ে–হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। সে দিন সেখানে জনিও যোগ দিয়েছিলেন। গভীর রাতে অনুষ্ঠানে মদ্যপ অবস্থায় স্টেজে উঠে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করছিলেন পুলিশের সোর্স সুমন। তার প্রতিবাদ করেছিলেন জনি। দ্বিতীয়বারও যখন একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন সুমন, তখন জনি তাঁকে থাপ্পড় মারেন। এটাই তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। জনিকে সেই অপরাধের মাশুল গুনতে হয়েছে জীবন দিয়ে। জনিকে ধরে থানায় নিয়ে গিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায় পুলিশ। হকি স্টিক ও ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে জনিকে বেদম পেটানো হয়। এস আই জাহিদ জনির বুকের ওপর উঠে নাচতে থাকেন। জনিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সকালে মিরপুরের ঢাকা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ হেপাজতে জনিকে হত্যার অভিযোগে ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট আদালতে মামলা দায়ের করেন জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর কোনও ঘটনায় বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম রায়।