আসনরফা নিয়ে কথা হবে বলে সব তাস আস্তিনে লুকিয়ে সভায় ছিলেন বাম–নেতারা। কিন্তু শুরুতেই সব আশায় জল ঢালল বিধান ভবন। কোন ফর্মুলায় রফা? তা নিয়ে দলে কথা হয়নি, তাই আলোচনা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় কংগ্রেস। অগত্যা যৌথ আন্দোলন নিয়ে আলোচনা সেরেই ফিরতে হল দু’পক্ষকে।
এদিন জোটের সলতে পাকাতে আলোচনায় বসেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, আব্দুল মান্নান, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টপাধ্যায়, সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরএসপি’র মনোজ ভট্টাচার্য।
বামেদের সঙ্গে আসনরফা নিয়ে দর কষাকষি করতে আগেই চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। চার বামদলের সকলে হাজির থাকলেও কংগ্রেসের চার সদস্যের মধ্যে দু’জন অনুপস্থিত থাকেন। ছিলেন না প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি ও বিধায়ক নেপাল মাহাত। সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই আসনরফা নিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু কথা শুরু করতে উদ্যোগী হলে বাধ সাধেন কংগ্রেসের দুই প্রতিনিধি বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। জানিয়ে দেন, হাইকম্যান্ড গঠিত কমিটির চারজন এখনও মুখোমুখি বসতে পারেননি। তাই আসনরফা নিয়ে তাঁদের পক্ষে আলোচনা শুরু করা সম্ভব নয়।
কিন্তু অন্য একটি সূত্রে খবর, বৈঠকে ১৪৫টি আসনের দাবি জানায় কংগ্রেস। তবে কংগ্রেসকে এতগুলি আসন ছাড়তে নারাজ সিপিএম। বাম শরিকদের যে এলাকাগুলিতে এখনও শক্তি রয়েছে, সেখানেও আসন দাবি করেছে কংগ্রেস। নিজেদের ক্ষতি করে কংগ্রেসের হাত ধরতে নারাজ বাম শরিকরা। তাদের বক্তব্য, বাংলায় যে এলাকাগুলিতে শক্তি রয়েছে, সেগুলিও ছেড়ে দিলে দলের আর অস্তিত্ব থাকবে না। শরিকদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে জোটে অনাগ্রহী সিপিএমও।
আবার আসনরফা করতে গিয়ে অযথা জটিলতা বাড়ালে বিজেপি–তৃণমূল সুবিধা পাবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসকদল যাতে কোনও সুবিধা না পায় সে বিষয়ে সম্মত হয় জোটের দুই শিবির। পুরুলিয়ায় ফরওয়ার্ড ব্লককে একটি আসনও ছাড়বে না বলে জেলা কংগ্রেস জানিয়েছে। বৈঠকে এই দাবি নাকচ করে দেন কংগ্রেসেরই দুই নেতা। তবে নির্বিঘ্নে আসনরফা কতটা সম্ভব তা নিয়ে ধন্দে বাম শিবির।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বাম–কংগ্রেসের খাতায়–কলমে জোট হয়নি, তা ছিল নির্বাচনী সমঝোতা। তাই বেশ কিছু আসনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াইও হয়েছিল। ২০১৬ সালে সিপিএম লড়েছিল ১৪৮টি আসনে। ১১টি আসনে সিপিআই। আরএসপি ১৯টি আসনে। ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএসপি ও এনসিপি যথাক্রমে ২৫, ২ ও ১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। ২০১৯ সালে আসনরফা না হওয়াতেই ভেস্তে গিয়েছিল যাবতীয় আলোচনা। আলাদা আলাদা লড়াই করেছিল বাম–কংগ্রেস।
২৩ জানুয়ারি নেতাজির ১২৫তম জন্মদিবসে হবে অনুষ্ঠান। সেখানে যোগ দেবে কংগ্রেস। আবার ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে বামেরা এককভাবে মানব বন্ধন ও ৩০ জানুয়ারি মৌলালি থেকে বেলেঘাটা গান্ধী আশ্রম পর্যন্ত যৌথ মিছিল করা হবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। যৌথ ব্রিগেড সমাবেশের সিদ্ধান্তও এদিন নেন বাম-কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ। তবে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে নির্বাচনে লড়াই করব। একসঙ্গে একমঞ্চে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের কথাও বলব।’
