দেশ ব্রেকিং নিউজ

কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল লখিমপুর

কৃষক বিক্ষোভ চলাকালীন আটজনের মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি। সংযুক্ত কিষান মোর্চার অভিযোগ, রবিবার শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ দেখিয়ে ফিরছিলেন কৃষকরা। সেসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে আশিস ও তাঁর দলবল গাড়ি নিয়ে কৃষকদের তাড়া করে। গাড়ি থেকে গুলিও ছুড়তে থাকে। গুলিতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। গাড়ি চাপা পড়ে মারা যান তিনজন।

পরে ক্ষুব্ধ কৃষকরা ওই গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয় চারজনের। লখিমপুর খেরির অতিরিক্ত এসপি অরুণকুমার সিং জানিয়েছেন, ঘটনায় চার কৃষক সহ আট জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়েই গোরক্ষপুর সফর কাটছাঁট করে ফিরে আসেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি জানান, দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাকেশ টিকায়েত সহ অন্য কৃষক নেতারাও রবিবার রাতে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সোমবার দেশের প্রতিটি জেলায় বিক্ষোভ দেখাবে টিকায়েতের সংগঠন ভারতীয় কিষান ইউনিয়ন। লখিমপুর খেরির বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবারই পাঁচ সাংসদের একটি টিম লখিমপুর খেরি পাঠাচ্ছেন তিনি। তাঁরা নিহত কৃষকদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবেন। মমতা এদিন স্পষ্টই বলেছেন, ‘কৃষকদের নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।’ এই প্রতিনিধি দলে থাকবেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, দোলা সেন, প্রতিমা মণ্ডল, আবিররঞ্জন বিশ্বাস, সুস্মিতা দেব।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র অবশ্য এদিন দাবি করেছেন, ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর ছেলের কোনও যোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মোটেও গাড়ি চালাচ্ছিল না। সে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের একটি অনুষ্ঠানে ছিল। কৃষকদের নামে কয়েকজন দুষ্কৃতী বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল। তারা আমার তিন কর্মী ও গাড়ির চালককে মেরে ফেলেছে। ঘটনার তদন্ত হওয়া দরকার।’

ঠিক কী হয়েছিল লখিমপুর খেরির টিকুনিয়া গ্রামে? সম্প্রতি কৃষকদের সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির একটি মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ছিল কৃষক সংগঠন। এদিন লখিমপুরের বনভীর গ্রামে তাঁর একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের। উপমুখ্যমন্ত্রী যাতে কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারেন, তার জন্য সকাল থেকেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। মহারাজা অগ্রসেন মাঠের হেলিপ্যাডের কাছে মৌর্যকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য কয়েক হাজার কৃষক জড়ো হন। হেলিপ্যাডের কাছে কৃষক বিক্ষোভের খবর পেয়েই পরিকল্পনা বদলে ফেলেন মৌর্য। তিনি লখনউ থেকে সড়কপথে লখিমপুর আসেন। সেই সময় টিকুনিয়া গ্রামে ক্ষুব্ধ কৃষকরা ওই অনুষ্ঠানের ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেন। শুরু হয় কালো ব্যাজ পরে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ শেষ হলে তাঁরা বাড়ির পথে রওনা দেন।

কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, সেই সময়ই কয়েকটি গাড়ি করে দলবল নিয়ে কৃষকদের তাড়া করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ছেলে আশিস (মনু)। তারা গুলি ছুড়তে থাকে। গাড়িতে চাপা পড়ে ও গুলিতে মৃত্যু হয় চারজনের। জখম হন অন্তত ১০ জন। গোলমালের খবর পেতেই পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। ঘটনাস্থলে আসেন জেলাশাসক ও পুলিস আধিকারিকরা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

কৃষি আইনের প্রতিবাদে হরিয়ানায় প্রধান সড়কগুলি এখন কৃষকদের দখলে। কৃষকদের রাস্তা অবরোধের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদনে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল হরিয়ানা সরকার। হলফনামায় তারা বলেছে, রাস্তা অবরোধের জেরে সাধারণ মানুষ ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই আন্দোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হোক।