চিনের ভরসায় পুকুর কেটে এখন বিপাকে পড়েছে নেপালের ওলি সরকার। বিতর্কিত মানচিত্র বিলটি নেপালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়ে গেলেও শাসকদলের নেতাদের চাপে বিপাকে পড়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। শুধু তাই নয়, যত দিন যাচ্ছে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে চাপ বাড়ছে দলের অন্দরে। দু’দিন আগেই কেপি শর্মা ওলি ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন এবং বলেন, তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। কার্যক্ষেত্রে দলের মধ্যেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। অনেকেই এখন বলছেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।
পদত্যাগের জন্য ওলির ওপরে চাপ বাড়াচ্ছেন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ চার নেতা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকুমার দহল, তথা প্রচণ্ডও। অন্য নেতারাও ভারতের সঙ্গে এত দিনকার মধুর সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য ওলির দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন। ভারত বিরোধিতায় সুর চড়িয়ে, প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি আগলাতে চেয়েছিলেন ওলি। বরং তাঁর এই পদক্ষেপ বুমেরাং হয়ে যায়। শাসকদলের অন্দরে ওলি–বিরোধিতা এতটাই তীব্রতর হয়েছে, কেপি শর্মা ওলিকে যে কোনও সময় প্রধানমন্ত্রীর গদি ছাড়তে হবে।
জানা গিয়েছে, কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলাকালীনও উত্তেজনা ছড়ায়। বিভিন্ন বিষয়ে ব্যর্থতার জন্য ওলিকে পদত্যাগ করতে বলেন দলের যুগ্ম সভাপতি প্রচণ্ড, বর্ষীয়ান নেতা মাধব নেপাল, ঝালানাথ খানাল এবং বামদেব গৌতম। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, অবিলম্বে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে পার্টি। ওলি অভিযোগ করেছিলেন, ভারত তাঁকে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে চাইছে। চাপ দিয়ে তাঁর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। তার জন্য নয়াদিল্লিতে একটি বৈঠকও হয়েছে।
এই বিষয়টি উল্লেখ করে প্রচণ্ড ওলিকে প্রশ্ন করেন, ভারত যে আপনার সরকার ফেলার চেষ্টা করছে তার প্রমাণ কোথায়? এরপরই প্রচণ্ড বলেন, ভারত নয়, আমিই চাই যে আপনি পদত্যাগ করুন। ব্যস, জোর বিতর্ক শুরু হয়ে যায় দলের অন্দরে। অনেকেই তখন ওলির পদত্যাগ নিয়ে সরব হন। কয়েকদিন আগেই তিনটি ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে, বিতর্কিত মানচিত্র তৈরি করে নেপাল। সংবিধান সংশোধন করে, বিতর্কিত মানচিত্রকে মান্যতাও দেওয়া হয়েছে। ওলির এই পদক্ষেপের পরেই কিন্তু ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। জনপ্রিয়তা দূর অস্ত, উলটে তাঁর গদিই এখন নড়বড়ে। শাসকদলের অন্দরে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় অলি নিজেও সেটা বুঝছেন। তাই দলের বৈঠকও তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, অতীতে প্রচণ্ড নেপালের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক অনেকটাই উন্নত হয়েছিল। শুক্রবার (২৬ জুন) কেপি শর্মা ওলির বাসভবনেই কমিউনিস্ট পার্টির স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানে তিনি যোগ না দেওয়ায়, দল তাঁর উপর ব্যাপক খেপেছে। ওলি নিজে বৈঠক ডেকে, নিজেই অনুপস্থিত ছিলেন। যার অর্থ, দলের অন্যান্য সদস্যদের অপমান করা।