দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার হাতছানি টের পেতেন। কিন্তু পেটের জ্বালা বড় জ্বালা! অভাবের সংসারে এই ধরনের স্বপ্ন দেখা দুঃসাহস ছাড়া আর কি! টোকিও অলিম্পিকে প্রথম দিনেই রূপোজয়ী মীরাবাঈ চানুর সাফল্য উদযাপনে সারা দেশ যখন ব্যস্ত, তখন স্বপ্নভঙ্গের স্মৃতি আঁকড়ে জীবনসংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বনগাঁর সৌমিত্র মণ্ডল। জাতীয় স্তরের এই খো খো খেলোয়াড়ের স্বপ্ন ছিল, একদিন হয়তো তিনিও দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবেন।
উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার আকাইপুরের বাসিন্দা সৌমিত্র।
২০১৮–১৯ মরশুমে ৩৮-তম জুনিয়র ন্যাশনাল খো খো চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। অভাবের তাড়নায় এরপর আর খেলাধুলো চালিয়ে যেতে পারেননি। এখন রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে জীবিকা চালান তিনি। তাঁর বাবা একজন ফুচকা বিক্রেতা। বড় দাদা আলাদা থাকেন। মেজদা, ভাই এবং বাবা-মাকে নিয়ে সংসার তাঁর। দাদা ও বাবার সামান্য আয়ে দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে চিকিৎসা ও সংসারের দৈনন্দিন খরচ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে।
তাঁর কথায়, ‘সংসার চালাতে বাবা, দাদাকে সাহায্য না করলে আমাদের পথে বসতে হবে। দারিদ্রের কারণে পড়াশুনোও বেশি দূর এগয়নি। দশম শ্রেণিতে পড়তে পড়তে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। মাঝখানে কিছুদিন ভিন রাজ্যে কাজ করলাম। এর ফলে ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েও অংশ নিতে পারিনি। করোনার কারণে লকডাউন চালু হওয়ায় কাজের জায়গা থেকেও ফিরে আসতে হয়েছিল।’
টোকিও অলিম্পিকে ভারতের কোন খেলোয়াড় কখন নামছেন, সেসব খবর নিয়ম করেই রাখছেন সৌমিত্র। তাঁর কোন কোন বন্ধু ভারতীয় খো খো দলে সুযোগ পেয়েছেন, সেসব খবরও এসে পৌঁছয় তাঁর কাছে। আফশোস করে তিনি বলেন, ‘যদি খেলাটা চালিয়ে যেতে পারতাম, আমিও হয়তো দেশের হয়ে খেলতে পারতাম। জাতীয় স্তরে সাব জুনিয়র গেমের সেমিফাইনালে উঠেও নিজেদের ছোট্ট ভুলে হেরে যাওয়ার স্মৃতি এখনও মন খারাপ করে দেয়। মাঝেমধ্যে পুরনো শংসাপত্র, ট্রফি হাতে নিয়ে দেখি।’
You must be logged in to post a comment.