সময়টা খারাপ। কিন্তু কতটা খারাপ তা ডাল লেকের ধারে গেলেই বোঝা যাবে। কারণ সেখানে ছাতা লাগিয়ে বারবিকিউ সাজিয়ে বসার লোক বেড়ে চলেছে। প্রথমে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপকে ঘিরে লকডাউন, তারপর করোনাকে ঘিরে লকডাউন—সব মিলিয়ে বাঁচার পথই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে কাশ্মীরে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। প্রশ্ন উঠছে, এই বেকারত্বের জ্বালায় কী কাশ্মীরের যুবক–যুবতী জঙ্গি খাতায় নাম লেখাচ্ছে? সরকার কাশ্মীর থেকে পর্যটকদের চলে যেতে বলেছিল এক বছর আগে। এখন সরকারকেই বোঝাতে হবে, কাশ্মীর পর্যটকদের জন্য নিরাপদ জায়গা। এখন এই দাবিই উঠছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ৩,১৬,৪৩৪ জন পর্যটক গিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ওই একই সময়ে সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় ৪৩ হাজারে। যাঁরা শিকারা চালাতেন, তাঁরা এখন অন্য কাজে নেমেছেন। কেউ সবজি বা ফল বেচছেন! তো কেউ রাস্তার পাশে বারবিকিউয়ের দোকান দিয়েছেন! করোনা এসে সমস্ত হিসেব ওলট পালট করে দিয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের সময় জম্মু–কাশ্মীরের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ঘোষণা করেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে প্রশাসনে ৫০ হাজার তরুণ–তরুণীর চাকরি হবে। এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু চাকরি? তা তো হল না। বরং বেকারত্ব এখানে চূড়ান্ত আকার নিয়েছে।
এদিকে কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দেওয়া হিসেব, কাশ্মীরের অর্থনীতি এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখ দেখেছে। চেম্বারে প্রেসিডেন্ট শেখ আশিকের কথায়, পর্যটন, পরিবহণ, তথ্যপ্রযুক্তি, হস্তশিল্প, সাধারণ ব্যবসা সবই লাটে ওঠার জোগাড়। করোনার জন্য লকডাউনে সারা ভারত সমস্যায় পড়েছে। আর কাশ্মীরে তো এক বছর পেরিয়ে গেল লকডাউন। করোনার বহু আগে থেকেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অনলাইন ক্লাস ভালো করে করার সুবিধাটুকুও নেই। কারণ এখানে ইন্টারনেট বলতে ২জি।
অন্যদিকে কাশ্মীরবাসীর মনে থাবা বসিয়েছে ভয়। নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থানীয় লোকজনের বাইরেও যে কেউ জমি কিনতে পারবেন, চাকরির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। অশান্তির আগুন আজও নেভেনি ভূস্বর্গে। এই তো বিজেপির দুই সরপঞ্চ খুন হলেন পরপর। জুলাই মাসেই এক বিজেপি নেতার ভাই ও বাবা খুন হয়েছেন উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরায়। ফলে জঙ্গিদমনে সরকার কড়া হলেও, কাশ্মীরি যুবকদের জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেওয়ার স্রোত আটকাতে পারেনি প্রশাসন।