ইসলামাবাদে হিন্দুরাও বসবাস করেন। কিন্তু তাঁদের জন্য শহরে মন্দির নেই। গোটা রাজধানী শহর ঘুরে ফেললেও মন্দির মেলা দুষ্কর। এককালে যা ছিল, তা কালের গতিতে লুপ্তপ্রায়। তাই ইসলামাবাদে শুরু হল প্রথম হিন্দু মন্দির স্থাপনের কাজ। মাটি খুঁড়ে মন্দির স্থাপনের কাজ শুরু করলেন পাকিস্তানের মানবাধিকার বিষয়ক সংসদীয় সম্পাদক লালচাঁদ মাহি। ইসলামাবাদের এইচ–৯/২ সেক্টরে কৃষ্ণ মন্দির স্থাপনের কাজ শুরু করে তিনি টুইটে লিখেছেন, এটা ইসলামাবাদের প্রথম হিন্দু মন্দির।
জানা গিয়েছে, বিশেষ দিনে, ধর্মীয় আচার পালনে, রাজধানীবাসী হিন্দুদের যেতে হয় অন্য শহরে। এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল হিন্দুজীবন। দাবি আদায়ের জোর ছিল না। আজও যে আছে, তা নয়। তাই রাজনৈতিক পালাবদলেও মন্দিরহীন শহর হয়েই থেকে গিয়েছিল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ। ২০১৭ সালেই হিন্দু কাউন্সিলকে ক্যাপিটেল ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ এই ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি মন্দির নির্মাণের জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু বারবার কোনও না কোনও কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল মন্দির নির্মাণ। এবার সেই কাজ শুরু করলেন লাল চাঁদ। পাকিস্তান সরকার এই মন্দির নির্মাণের জন্য ১০ কোটি টাকা খরচ করবে বলে জানিয়েছেন সে দেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী পির নুরুল হক কাদরি।
হঠাৎ পাকিস্তান সরকার হিন্দু মন্দির নির্মাণ করতে উদ্যোগ নিচ্ছে কেন? কী এমন ঘটল যে কোণঠাসা করে রাখা হিন্দুদের জন্য মন্দির তৈরি করতে গেল ইমরান খানের সরকার? উঠছে প্রশ্ন। সূত্রের খবর, এবার ছবিটা বদলাচ্ছে। হিন্দুদের কথা ভেবে, তাঁদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে এই প্রথম গড়ে উঠতে চলেছে মন্দির। তার মূল কারণ, বিশ্বের কাছে নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ করে তোলা। তাছাড়া দেশের নির্বাচনে হিন্দু ভোটব্যাঙ্কও হাতছাড়া করতে নারাজ ইমরান সরকার। একইসঙ্গে বিদেশের অর্থনৈতিক সহবিল যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই ভাবমূর্তিতে তা যাতে পুনরুদ্ধার করা যায়।
এইসব কারণে শুধু মন্দির নয়, জীবনের শেষ আশ্রয়ের ঠিকানা হিসাবে একটা শ্মশানও পাবেন হিন্দুরা। পরিজনের শেষকৃত্যে এই শ্মশানের খোঁজ করতেও কম নাকাল হন না সেখানকার হিন্দুরা। ইসলামাবাদের হিন্দু সংখ্যালঘুরা বারবার এই মন্দিরের দাবি জানিয়ে এসেছেন। এই শ্রী কৃষ্ণ মন্দির হয়ে গেলে আর রাওলপিন্ডিতে উপাসনার জন্য যেতে হবে না তাঁদের। লালচাঁদ মাহি বলেন, ‘ইসলামাবাদে হিন্দুদের জনসংখ্যা অতীতের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। কিন্তু উপাসনা করার মন্দির ছিল না। যা ছিল, তা অনেক পুরনো। জরাজীর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত। তাই সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য।’ এখানে লাল চাঁদ মাহি, প্রীতম দাস, মহেশ চৌধুরি, অশোক কুমার–সহ বাকি হিন্দু পঞ্চায়েত সদস্যদের উপস্থিতিতে মাটি খুঁড়ে কাজ শুরু হল মন্দিরের।
