সরকার গঠন হলে তার মাথায় থাকবে কে? মোল্লা বরাদরের নাম সবার উপরে থাকলেও এখনও বেশ কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে সেই ক্ষমতা নিয়ে। তালিবান নাকি হাক্কানী নেটওয়ার্ক কারা বেশি গুরুত্ব পাবে? এই প্রশ্ন এবার সামনে আসছে। আর তারই মধ্যে আফগানিস্তানের হাজির হলেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধান তথা আইএসআই চিফ। ক্ষমতার বিভাজন নিয়ে চরম কোন্দল শুরু হয়েছে তালিবানের অন্দরে। নতুন সরকার ও সেনাবাহিনীর রাশ হাতে রাখতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে ঠান্ডা লড়াই। শুরু হয়েছে দড়ি টানাটানি। তারই মধ্যে শনিবার দুম করে কাবুলে উপস্থিত হয়েছেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান জেনারেল ফাইজ হামিদ।
পাকিস্তান থেকে আইএসআই চিফ জেনারেল ফইজ হামিদ শনিবার কাঁপলে পৌঁছেছেন। সূত্রের খবর, সরকার গঠনের প্রাক্কালে তাঁকে নাকি আমন্ত্রণ জানিয়েছে তালিবান নেতৃত্ব। যদিও সে কথা স্বীকার করছে না পাকিস্তান। কাবুলে নেমে আইএসআই প্রধান জানান, আদতে অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই তালিবানের সঙ্গে কথা হবে তাঁর। আশ্বাসের সুরের আইএসআই প্রধান বলেন, ‘চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।’ পাকিস্তান চাইছে, আফগানিস্তানের নতুন সেনাবাহিনীর রাশ থাকুক হাক্কানি গোষ্ঠীর হাতে। হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে গোপনে আইএসআই-এর এতদিনের সুসম্পর্ককে এখন কাজে লাগাতে মরিয়া ইসলামাবাদ। সূত্রের খবর, নতুন আফগান সরকারের ক্ষমতা, মন্ত্রিসভার চেহারা ও সেনাবাহিনীর রাশ নিয়ে প্রবল সংঘাত চলছে প্রয়াত মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব, সম্ভাব্য শীর্ষনেতা মোল্লা আব্দুল গনি বরাদর ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যে।
শোনা যাচ্ছে বরাদরকে নিয়ে নাকি তালিবানের একাংশের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। এমনকী বরাদরের অনুগামীরা যাতে পঞ্জশীর দখলের লড়াইতে যোগ না দেয় সেই বার্তাও নাকি দেওয়া হয়েছে। আর এই আভ্যন্তরীণ লড়াইতে তালিবান এক নতুন চাপের মুখে পড়েছে বলে মনে করছে অন্তর্জাতিক মহল। পাকিস্তান চাইছে, আফগানিস্তানের সামরিক ক্ষমতার রাশ থাকুক আইএসআই ঘনিষ্ঠ হাক্কানিদের হাতে। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোল্লা ইয়াকুবের কোয়েটা সুরা গোষ্ঠী। নতুন আফগান সেনাবাহিনী হাক্কানি গোষ্ঠী বা মোল্লা বরাদরের হাতের পুতুল হয়ে পড়ুক, তা চাইছে না মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব। এই অভ্যন্তরীণ সংঘাত কাটিয়ে কাবুলের নতুন সরকার ও সেনাবাহিনীতে পাকিস্তানের প্রভাব নিশ্চিত করতেই আইএসআই প্রধান জেনারেল হামিদ তড়িঘড়ি আফগানিস্তান ছুটে গেলেন। কাবুলে শীর্ষ তালিবান নেতৃত্ব ও কমান্ডারদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে।
সূত্রের খবর, বরাদর সরকার প্রধান হলেও হাক্কানি নেটওয়ার্কের সিরাজুদ্দিন হাক্কানিকেও সরকারে জায়গা দেওয়া হবে। একসময় এই বরাদরকে বন্দি করেছিল পাকিস্তানের আইএসআই। তাই সেই পাক গোয়েন্দা প্রধানের এই কাবুলে আগমন মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না বরাদর। মুখপাত্র মজাহিদ এদিন বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে নতুন সরকার ও মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করা হবে।’ বিভিন্ন অংশের সঙ্গে আলোচনার জন্য তালিবান গঠিত কমিটির সদস্য খলিল হাক্কানি বলেন, চাইলে যে কোনও মুহূর্তে সরকার গঠনের ঘোষণা করে দেওয়া যায়। কিন্তু আমরা চাই, শুধু তালিবান নয়, আফগানিস্তানের সব দল, গোষ্ঠী ও সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব থাকুক নতুন সরকারে। সম্মিলিত এই সরকারকে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চাইছি আমরা।