সাধারণত রাষ্ট্রনায়কদের সাংবাদিক সম্মেলনে এটা দেখা যায়। কোনও রাষ্ট্রনায়ক অর্থাৎ কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি সাংবাদিক সম্মেলন করলে পিছনে সেই দেশের জাতীয় পতাকা সার দিয়ে রাখা থাকে। এই জাতীয় দৃশ্য কোনও প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রে দেখা যায় না। বৃহস্পতিবার যা দেখা গেল নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনে। মমতার আসনের পিছন দিকে দুই পাশে দুটি করে জাতীয় পতাকা দাঁড় করানো ছিল এদিন। মমতার আসনের দু’পাশে জাতীয় পতাকার এমন অবস্থান আগে দেখা গিয়েছে বলে সরকারি আধিকারিকদের কেউ মনে করতে পারছেন না।
হটাৎ কেন এই ভোলবদল? বাংলার রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের জল্পনা শুরু হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছেন, এই ভোলবদল ভাবেচিন্তেই করা হয়েছে। একুশের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে বাংলায় মাটি ধরিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে তিনি এখন একেবারে প্রথমসারিতে চলে এসেছেন। কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী জোটের প্রধান মুখ এখন বাংলার তৃণমূল নেত্রী। তাই প্রতীকী হলেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার। অপর পক্ষের বক্তব্য, বাংলা দখলের পর দিদির লক্ষ্য এবার দিল্লি। তিনি নিজেই দিল্লি দখলের ডাক দিয়েছেন। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্র থেকে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে হঠাতে তিনিই এখন বিরোধী ঐক্যের কান্ডারি। তাই নবান্নে জাতীয় পতাকার সাজে মোদীকে পরোক্ষে বার্তা দিতে চাইলেন তিনি।
কেন এ ভাবে মমতার ঘর সাজানো হয়েছে তা নিয়ে কোনও ব্যাখ্যা নবান্ন বা তৃণমূল সূত্রে পাওয়া যায়নি। তবে তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, এটা আনুষ্ঠানিক পরিবর্তন। কারণ বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেস মিটে উপস্থিত ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁদের বক্তব্য, অভিজিৎ বিনায়কের মতো একজন ‘আন্তর্জাতিক’ স্তরের মানুষ বৈঠকে এবং সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলেই মুখ্যমন্ত্রীর আসনের প্রেক্ষাপটে জাতীয় পতাকা রাখা হয়েছিল।
কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে সাধারণ কর্মীরা পর্যন্ত দিদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। বুধবারই ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেতা দেব বন্যা কবলিত ঘাটালে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যতদিন না প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, ততদিন ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হবে না। তাই দিদিকে প্রধানমন্ত্রী করতেই হবে”। যদিও এটা কথার কথা নয়। ইতিমধ্যেই মমতাকে প্রধানমন্ত্রী চেয়ে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে প্রচার শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
গোটা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে মমতার ছবি সহ বিভিন্ন পোস্টার পড়ছে। সেখানে স্লোগান উঠছে ‘দিদি আ রহি হ্যায়’। আবার বামশাসিত কেরলের রাস্তায় রাস্তায় মমতার ছবি দিয়ে হোর্ডিং পড়ছে ‘কল দিদি, সেভ ইন্ডিয়া’। এবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতার প্রেক্ষাপটে স্থান পেল জাতীয় পতাকা। বার্তা তিনিই ভাবি দিনের রাষ্ট্রনায়ক।
You must be logged in to post a comment.