ফের ডোকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সীমান্তে। আর তা নিয়ে এখন ভারত–চিন স্নায়ুযুদ্ধ চরমে উঠেছে। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের আগ্রাসনে ক্রমশ চড়ছে উত্তেজনার পারদ। তার জেরে তৎপরতা বাড়ছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরেও। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গেও পৃথকভাবে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধানও। চিনের আগ্রাসন প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ভারতের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ডোকালাম সংকটের পর ফের বড় সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে ভারত–চিন। আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বিবাদ সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্বেও আগ্রাসী ভূমিকা ত্যাগ করেনি চিন। এই মনোভাবে একাধিকবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দু’দেশের সীমান্ত। যার সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত পূর্ব লাদাখ।
জানা গিয়েছে, পূর্ব লাদাখের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কনট্রোলের আশপাশের এলাকা। ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে দুই থেকে আড়াই হাজার সেনাকর্মী মোতায়েন করেছে চিন। একই সঙ্গে বাড়ছে লালফৌজের অস্থায়ী সেনা ছাউনি। ওই এলাকায় প্রতিপক্ষ চিনের থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তি অনেক বেশি। যে কারণে ভারতের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্যাংগং সো এবং গালওয়ান উপত্যকায় বাড়ানো হয়েছে জওয়ানের সংখ্যা।
এদিকে লাদাখে চিনে আগ্রাসন ইস্যুতে মঙ্গলবার কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবিলম্বে দেশের জনগণকে জানানো উচিত মোদী সরকারের। কেন্দ্রের উচিত এই বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেও চিনের সেনা এদিক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছে। তবে এবারের ঘটনাটি হালকাভাবে নেওয়া যায় না। এখন মুখে কিছু না বললেও নয়াদিল্লি যে গোটা বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী–সহ তাঁর মন্ত্রিসভার এদিনের তৎপরতা থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে নেপালও। সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানের মন্তব্য নিয়ে গোর্খাদের উসকানোর চেষ্টা করলেন নোপালের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঈশ্বর পোখলেল। কালাপানি নিয়ে যে বিবাদ দু’দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে তাতে নেপালের পেছনে চিনের ইন্ধন রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেছেন নারাভানে বলে মন্তব্য করেছেন পোখরেল। তাঁর দাবি, ভারতীয় সেনাপ্রধান গোর্খাদের ভাবাবেগে আঘাত করেছেন। সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনে যুদ্ধও করবে নেপালি সেনা। ফলে আবার কী যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে? নাকি আর একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হবে? এইসব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।