নতুন করে মিশন কাশ্মীর। কাবুলে ইতিমধ্যেই তালিবান বনাম আইএসকে (ইসলামিক স্টেট খোরাসান) লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে ভারত-বিরোধী অ্যাজেন্ডা কার্যকর করতে নেমে পড়েছে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের এই সতর্কবার্তার অন্যতম কারণ—পাকিস্তানের মদতে কাবুলের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের দিকে রওনা দিয়েছে জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই-মহম্মদের অন্তত ১০০ জঙ্গি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটে এসে পৌঁছেছে।
গত ১৭ থেকে ১৯ আগস্ট পশ্চিম পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুর থেকে কাবুলে এসে তালিবানের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বৈঠক করেছে জয়েশ সুপ্রিমোর দুই ভাই মওলানা আনোয়ার এবং আবদুল রউফ আজহার। এই বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে আইএসআই। কান্দাহারে একটি বৈঠকে স্বয়ং মাসুদ আজহারও উপস্থিত ছিল বলে একটি সূত্র থেকে দাবি করা হয়েছে। যদিও সেব্যাপারে এখনও নিশ্চিত নন গোয়েন্দারা। তাদের কয়েকটি সূত্রের অবশ্য রিপোর্ট, জয়েশ প্রধান বৈঠকে হাজির ছিল না। কারণ, গত কয়েক মাস ধরে মেরুদন্ডের সমস্যায় ভুগছে মাসুদ আজহার।
এই অবস্থায় চরম অরাজক অবস্থায় থাকা আফগানিস্তানে সে হাজির হতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু কাশ্মীরে নতুন করে আঘাত হানার ব্যাপারে যে মাসুদ ও তালিবানের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা নেই। সেই কাজেই লাগানো হয়েছে কোয়েটা থেকে আসা জঙ্গিগোষ্ঠী এবং কাবুলের জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত জয়েশ জঙ্গিবাহিনীকে।
কাবুলের বাইরে জয়েশের প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রচুর অস্ত্রও জড়ো হয়েছে বলে খবর। বিগত ২০ বছর ধরে আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী করে তুলতে যে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার সরবরাহ করেছে মার্কিন সেনাবাহিনী ও পেন্টাগন, তার সিংহভাগই এখন তালিবানের দখলে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, সেই অস্ত্রই জয়েশের হাতে পৌঁছতে পারে। জয়েশের এই ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীতে আইএসের একটি বিদ্রোহী অংশও যোগ দেওয়ার খবর এসেছে। আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে তালিবানের পর সবথেকে শক্তিশালী আইএসকে। ২০১৫ সালে তৈরি হওয়া এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তালিবানের সম্পর্ক এখন তিক্ততার পর্যায়ে। কিন্তু আইএসের একটি বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে পাশে পেয়েছে জয়েশ।
এই কারণেই চরম সতর্কতা নিয়েছে ভারত সরকার। পশ্চিম ভারতের প্রায় প্রতিটি সীমান্তেই সেনা এবং আধাসেনা মোতায়েন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুক্রবার দফায় দফায় বৈঠকে বসেছে বিদেশ মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রস্তুতির নির্দেশিকাও দেওয়া হয়েছে আধাসেনা কর্তাদের। আফগানিস্তানে তালিবানের আড়ালে এখন মরিয়া পাকিস্তান। এবার ‘অপারেশন কাশ্মীর’।