পৃথিবীর গভীরতম অসুখ এখন। এক অদ্ভুত আঁধার ঢেকেছে পৃথিবীকে। প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি বছর আগে এই গ্রহে প্রাণের প্রথম চিহ্ন হিসাবে যে এসেছিল সেই ভাইরাসের দাপটে পৃথিবীর উন্নততম জীব এবং তাঁর যাবতীয় আবিষ্কার চরম সঙ্কটের মুখে।যেন চূড়ান্ত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছে মানব জাতির। গৃহবন্দি মানুষ ভুলতে চলেছে যে সে সামাজিক জীব।অলিখিত কার্ফু চলছে দেশ জুড়ে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষও ঘরে বন্দি। তবে খাবার জুটবে কীভাবে?
সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভেবে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার এগিয়ে এসেছেন। ঘোষিত হচ্ছে নানা প্রকল্প। কিন্তু এর বাইরেও একদল প্রাণী আছে যাদের এই লকডাউনের ধাক্কায় খাওয়া জোগাড় করাই মুশকিল হয়েছে। বিশেষত মফস্বল ও গ্রামগঞ্জের এই শয়ে শয়ে কুকুরেরা এখন আনাহারে। অধিকাংশ মানুষ যখন নিজেদের খাবার মজুত করতে হুড়োহুড়ি শুরু করেছে তখন রাস্তার কুকুরদের নিয়ে মাথাব্যাথা করার সময় কোথায়?
প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফেরার সময় পাড়ার কুকুরদের বিস্কুট দেওয়ার অভ্যাস উত্তর চব্বিশ পরগণার হাবড়ার বিদ্যাসাগর রোডের বাসিন্দা শম্ভু মিত্রের। যেদিন রাজ্যের কোথাও কোথাও লকডাউন শুরু হল সেদিন বাড়ি ফেরার পথে কুকুরদের খাওয়াতে খাওয়াতে তাঁর মনে হল ‘কাল থেকে কি খাবার পাবে এই কুকুরগুলো?’ তখনই ফিরে গিয়ে বেশী করে বিস্কুট কিনে আনে আগামী কয়েক দিনের জন্য। কিন্তু পরদিন খাবার দেওয়ার সময় মনে হল চারিপাশের অন্য কুকুরদের কি হবে। সেই থেকে রাত হলেই শুরু হচ্ছে তাঁর কাজ। শম্ভুবাবু জানালেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে হাবড়ার ২ নম্বর রেল গেট থেকে যশোহর রোড ধরে হাটথুবা মোড় পর্যন্ত এবং আশেপাশের সব গলির প্রায় শখানেক কুকুরকে খাওয়ানোর কাজ চলছে। সঙ্গে এগিয়ে এসেছে শুভ,সুজিতের মত বন্ধুরাও। একার পক্ষে তো সম্ভব নয়।’ কতদিন চলবে কুকুরদের জন্য এই পরিসেবা? সুজিত বিশ্বাস জানালেন, ‘যতদিন লকডাউন চলবে ততদিন আমরা খাওয়ানোর চেষ্টা করব। আর একেকদিন মেনুও আলাদা আলাদা হবে। খিচুড়ি, মাংস খাওয়ানোরও ইচ্ছা আছে আমাদের।তবে এতদিনের জন্য অর্থের প্রয়োজন। অনেকেই শুনে এগিয়ে আসছেন।’কী বলছেন স্থানীয় প্রশাসন? হাবড়ার বিডিও শুভ্র নন্দী বললেন,’খুবই প্রশংসনীয় কাজ। তবে মনে রাখতে হবে সে যেন করোনা ভাইরাসের থেকে নিজের সব রকম সুরক্ষা নিয়ে কাজটা করে। আর কোনভাবেই দল বেঁধে কাজ করা যাবে না।’ হাবড়া থানার আইসি গৌতম মিত্রও এই ধরনের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানালেন। কিন্তু কোনভাবেই যাতে এই সময়ের নিয়ম লঙ্ঘন না হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বললেন।