বিখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি করা করোনা ভ্যাকসিন টানা তৃতীয় ট্রায়ালেও সফল হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক এই মহামারি রুখতে বিশ্বের অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীদের চেয়ে তারা বহুগুণ এগিয়ে গিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, সব ঠিক থাকলে জুলাই মাসের প্রথমেই অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসতে পারে।
এদিকে আরব আমিরাত ও চীনের যৌথভাবে তৈরি একটি ভ্যাক্সিনেরও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এই গবেষণা করছে আমিরাত ভিত্তিক কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা কোস্পানি জি৪২ এবং চীনা কোম্পানি সিনোফার্ম গ্রুপ। প্রথম দুই ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনও সাফল্য পেয়েছে।
অক্সফোর্ড ও অক্সফোর্ডের অধীনস্থ জেন্নার ইউনিভার্সিটির গবেষকদের ডিজাইন করা ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল যুক্তরাজ্যে চলছে। ডিএনএ ভ্যাকসিনের প্রথম হিউম্যান ট্রায়াল এপ্রিলে শুরু হয়েছিল। এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালের দায়িত্বে ছিলেন, ভাইরোলজিস্ট সারাহ গিলবার্ট, অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড, টেরেসা লাম্বে, ডক্টর স্যান্ডি ডগলাস ও অধ্যাপক অ্যাড্রিয়ান হিল এবং জেন্নার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রজেনেকা প্রাইভেট লিমিটেড ব্রাজিলে কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালিয়ে যাচ্ছে। লেমানন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ব্রাজিলে করোনার হটস্পট সাও পাওলো ও রিও ডি জেনিরোতে মোট ৩০০০ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। তার মধ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী-সহ সাও পাওলোতে ২০০০ জন ও রিও ডি জেনিরোতে হাজার জনকে দেয়া হচ্ছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। প্রথম পর্যায়ে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য তিন হাজার জনকে বেছে নেয়া হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আরো অনেকজনকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এপ্রিলে প্রথমবার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করেছিল। প্রথম দু’জনের শরীরে ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন নারী বিজ্ঞানী। নাম এলিসা গ্রানাটো। আরো ৮০০ জনকে দুটি দলে ভাগ করে কন্ট্রোলড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছিল।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, দেশের বাইরে প্রথমবার শুরু করা হয়েছে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট ভাল হলে, অন্যান্য দেশেও ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হবে।
ভ্যাকসিনের ডোজ ঠিক করার জন্য শুকরের উপর ট্রায়াল করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অক্সফোর্ডের সারা গিলবার্টের টিম। পিরব্রাইট ইউনিভার্সিটি এই ট্রায়ালের দায়িত্বে ছিল। ভাইরোলজিস্টরা বলেছেন, শুকরের বিপাক ক্রিয়া ও কোষের সঙ্গে মানুষের কোষের অনেক মিল আছে। তাই সেফটি ট্রায়াল করে ঠিক করে নেয়া হয়েছিল ডোজের সঠিক মাত্রা। জেন্নার ইনস্টিটিউট ভাইরোলজি বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করা হয়েছে এই ভ্যাকসিনের ডিজাইন। এই গবেষণায় অক্সফোর্ডের পাশে রয়েছে অ্যাস্ট্রজেনেকাও।
সারা গিলবার্টের টিম প্রথমবার যে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করেছিল তার নাম ChAdOx1 nCoV-19। তবে এই ভ্যাকসিনের ক্নিনিকাল ট্রায়াল রেসাস প্রজাতির বাঁদরের উপর ব্যর্থ হয়। অক্সফোর্ড জানায়, ওই প্রজাতির বাঁদরের শরীরে কোভিড সংক্রমণ রুখতে না পারলেও এই ভ্যাকসিন নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করেছে। পরে নতুন করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেটের ডিজাইন করে অক্সফোর্ড। বর্তমানে এর নতুন ভার্সনের নাম হয়েছে AZD1222।