সালটা ১৯৩০, দেশজুড়ে তখন ব্রিটিশদের রাজত্ব চলছে। তাঁদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন সাহসী যুবা। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে লড়াই করছেন বিপ্লবীরা। কথিত আছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহস ও শক্তি সঞ্চয় করতে কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন বর্তমান মালদা জেলার ইংরেজবাজার এলাকার তৎকালীন বিপ্লবীরা। মালদার পুড়াটুলিতে দশ মাথা ওয়ালা মহাকালীর আরাধনা শুরু করেন তাঁরা। পরবর্তীকালে দেশ পরাধীনতার বন্ধন মুক্ত হলে ১৯৮৫ সালে ইংরেজবাজারে গঙ্গাবাগে মন্দির তৈরি করে পাকাপাকিভাবে শুরু হয় মাতৃ আরাধনা।
ফলে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পরতে পরতে জড়িয়ে আছে এই পুজোর সঙ্গে। সেই ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া এই পুজোই এখন ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতির মহাকালীর পুজো হিসাবে খ্যাত। একসময় ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোমর বেঁধেছিল মালদার তৎকালীন যুবসমাজ। তাঁরা শরীরচর্চার জন্য একটি ব্যায়াম সমিতি গঠন করে দেহচর্চা শুরু করেন। কিন্তু আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দরকার সম পরিমান সাহস। তাই শুরু হয় শক্তির আরাধনা। তাঁদের আরাধ্য ছিলেন দশমাথা-দশভূজা মহাকালি। এখানে দেবীর ১০ মাথা, ১০ হাত ও ১০ পা রয়েছে। প্রতিমায় শিবের কোনও অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুণ্ড। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে অমাবস্যা তিথির পরিবর্তে তান্ত্রিক মতে মায়ের পুজো হয় কৃষ্ণা চতুর্দশীতে। এখনও চালু রয়েছে বলিপ্রথা।
মায়ের মন্দির নির্মাণ নিয়ে এলাকায় রয়েছে অনেক কাহিনী। স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে মহাকালের মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্র সাধনা করতেন এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্লধন মুখোপাধ্যায়। সাধনার জন্য তৈরি করেন পঞ্চমুণ্ডির আসন। সেই আসনের উপরে দেবীর বেদি নির্মিত হয়েছে। প্রফুল্লবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধর ও স্থানীয় মানুষজন এই পুজো চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি। উদ্যোক্তাদের দাবি, শ্রী শ্রী চণ্ডীতে বৈকৃতিক রহস্য অধ্য়ায়ে এই মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি।
পাঠাবলি দিয়ে তাঁর রক্ত উৎসর্গের মাধ্যমে পুজো শুরু হয় কালীপুজোর আগের দিন অর্থাৎ ভূত চতুর্দশীতে। বলির শেষে শোল মাছের টক রান্না করে দেওয়া হয় মাকে। চতুর্দশীর সকালে মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রা সহকারে। শোভযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের বাদ্য বাজনার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি পাঁচ দিন ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষের দিন দরিদ্র নারায়ণ সেবা। তবে এবার করোনা আবহের মধ্যে বিভিন্ন রকম সচেতনতা অবলম্বন করে পুজো অনুষ্ঠিত হবে।