জেলা

ইতিহাসের কালী: বলির সময় কেঁপে ওঠে মানিকোড়ার কালী

মালদার হবিবপুর থানা এলাকার মানিকোড়ার কালী খুবই জাগ্রত বলে বিশ্বাস এলাকাবাসীর। আজও কান পাতলে স্থানীয় জনশ্রুতি এবং এই কালীর মাহাত্ম্যের বহু হাড়হিম করা গল্প শোনা যায়। এক সময় ডাকাতদের হাতে পূজিতা হতেন ‘মানিকোড়া কালী’। সময় বদলেছে পুজোর উদ্যোক্তারাও বদলেছে। কিন্তু প্রাচীন রীতি আজও বর্তমান। আজও বলির সময় দেবী মূর্তিকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রচলন রয়েছে। এই রীতির পিছনে বহু গল্প রয়েছে।

 

জনশ্রুতি ৩০০ বছরের বেশি সময় আগে এই অঞ্চলে প্লাবিত পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে এক দল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় এই দেবীর পুজো দিতে আসতো। রাতের অন্ধকারে পুজো দিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই তাঁরা নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত। পরবর্তী সময় ডাকাতদের রমরমা কমে যায়। ফলে জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির কার্যত পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় এক জমিদার ভৈরবেন্দ্র নারায়ণ রায় জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পান। তাঁরই উদ্যোগে ফের শুরু হয় পুজো। আজ অবশ্য পুজো পরিচালনা করেন স্থানীয় মানুষরাই। কথিত আছে এখানে অমাবস্য়ার গভীর রাতে ডাকাত দল মশাল জ্বালিয়ে পুজো করতেন মা কালীর।

 

সেই সময় দেওয়া হল ছাগ বলি। সেসময় দেবীমূর্তি কেঁপে ওঠে। পাঁঠা বলির সময় মায়ের মূর্তি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে চায়। তাই মূর্তি যাতে পড়ে না যায় তার জন্য মায়ের মূর্তি লোহার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতো ডাকাত দল। বর্তমানে মায়ের চক্ষু দান ও পাঁঠা বলির সময় দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আরেকটি গল্প প্রচলিত এই মানিকোড়ার কালী নিয়ে। স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে এই গল্প। কোনও এক সময় গ্রামে শাখা ফেরি করতে এসেছিলেন শাঁখারি। গ্রামের পথে এক বালিকা তার কাছে শাঁখা পরতে চায়। শাঁখারি তার হাতে শাঁখা পরিয়ে দেন। কিন্তু দাম চাইতেই ওই বালিকা বলে ওঠেন, তার কাছে পয়সা নেই, শাঁখার দাম তার বাবা দেবেন। সেই বালিকা বলে, তার বাবা কালী মন্দিরের সেবায়েত। শাঁখারি কালী মন্দিরে গিয়ে সেবায়েত-এর কাছে শাঁখার দাম চাইতেই অবাক হয়ে যান ওই সেবায়েত।

 

তিনি বলেন, তাঁর কোন মেয়ে নেই। কে শাখা পরেছে? হঠাৎ তাঁর নজর যায় পাশের পুকুরের দিকে। দেখতে পান জলের উপরে একটি মেয়ে দুই হাত উঁচু করে রয়েছে। দু’টি হাতে রয়েছে একজোড়া নতুন শাঁখা। মুহূর্তে সেবায়েত বুঝে যান, ওই মেয়ে আর কেউ নন, স্বয়ং মা কালী। মুহুর্তের মধ্যেই শাখার দাম মিটিয়ে দেন তিনি। বর্তমানে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার ছাড়াও আষাঢ়, কার্তিক, অগ্রহায়ণ মাসে দেবীর বিশেষ পুজো হয়।