অনেকেই হয়তো জানেন না কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশের নাম। তিনিই কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলিত দক্ষিণাকালীর রূপকার। তাঁর হাত ধরেই তৎকালীন বঙ্গদেশে ঘরে ঘরে পুজো পান মা কালী। আর তাঁর নয়নের প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের নামও তাই তাঁর নামে। আগমেশ্বরী কালীমাতার মন্দির। নদিয়ার শান্তিপুরে যা আজ অন্যতম কালীপীঠ। সেখানে আজও নিষ্ঠা-সহ পুজো হয় প্রতি বছর কালীপুজোর দিন। দক্ষিণাকালীর রুপকারের পুজো বলে কথা, এর আচার-অনুষ্ঠানে কোনও ছেদ পড়ে না। তাঁর লেখা “বৃহৎতন্ত্রসার” পুস্তকেই প্রথম লিখিত হয়েছিল “শ্যামা পূজা” বা দক্ষিণাকালীর পুজো পদ্ধতি।
আজও নদিয়ার শান্তিপুরে আগমেশ্বরী কালীমাতার মন্দিরে গেলে আপনি চোখ বুঝলেই উপলব্ধি করতে পারবেন সেই অমাবস্যার রাতের দৃশ্য। ঘোর অমাবস্যার রাত, এক তান্ত্রিক বসেছেন তন্ত্রসাধনায়। আর নিজের হাতেই তৈরি করছেন দেবীমূর্তি। পুজো শেষ হওয়ার পর ভোররাতেই দেবীমূর্তিকে বিসর্জন দিচ্ছেন তিনি। তিনিই কৃষ্ণনন্দ আগমবাগীশ, দক্ষিণাকালী মূর্তির প্রবর্তক। প্রতি অমাবস্যায় তাঁর বাড়ি অর্থাৎ নবদ্বীপের আগমেশ্বরী মন্দিরে একই রীতিতে পুজো হয়। আর কার্তিকী অমাবস্যায় অর্থাৎ কালীপুজোর দিন কৃষ্ণনন্দ পূজিত কালীমূর্তির পুজো হয় মহা ধুমধামে। তবে এখানে কালীর সঙ্গে পুজো পান গোপালও। কারণ কৃষ্ণনন্দ নিজে তন্ত্রসাধক হলেও তাঁর বাবা ও ভাই ছিলেন বৈষ্ণব। ফলে এই পুজোতে বাড়ির গোপাল এনে বসানো হয় মা কালীর পাশে। এবং রীতি মেনে হয় পুজো।
আগমেশ্বরী কালীমাতার পুজোর রীতি একেবারেই আলাদা। প্রতি বছর কার্তিক মাসের পঞ্চমী তিথিতে শুরু হয় পুজো। ওই দিন থেকেই কৃষ্ণনন্দের বংশধরেরা নিজের হাতে খর-মাটি দিয়ে একটি পাঁচ পোয়া কালীমূর্তি তৈরি শুরু করেন। এরপর একাদশী পর্যন্ত ওই মূর্তিতেই চলে পুজো-পাঠ ও ভোগ নিবেদন। একাদশী তিথিতে শুরু হয় বড় প্রতিমা তৈরির কাজ। তখনই ওই ছোট মূর্তিটি বড় প্রতিমার হৃদয়ে বা বুকের কাছে স্থাপন করা হয়। ভূত চতুর্দশীর দিন বড় প্রতিমার মাথা বসানো হয় এবং পরের দিন অর্থ্যাৎ অমাবস্য়ায় প্রতিমার চোখ আঁকা হয়। এরপরই শুরু হয় মূল পুজো। আগমেশ্বরী কালিমাতার পুজোর ভোগে থাকে অড়হর ডালের খিচুড়ি, এঁচোড়, মোচা এবং চালতার টক। তবে আগমেশ্বরী মাতার বিসর্জন হল দর্শনীয় ব্যাপার। কালীপুজের পরদিন বেলা ১২টার আগেই বেহারাদের কাঁধে চেপে হয় বিসর্জন।