আইনজীবীই যদি অর্থের লোভে ছলচাতুরি করে তাহলে বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে খোদ কলকাতা হাইকোর্টে। যে ঘটনা নিয়ে এখন ঢি ঢি পড়ে গিয়েছে। জামিনের আবেদন সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ বলেছিল, মামলাটির শুনানি এখন হবে না। আদালতের কাজকর্ম স্বাভাবিক হলে মামলাটির শুনানি হবে। এমনকী নির্দেশও জারি করে হাইকোর্ট। আর সেই নির্দেশ গোপন করে হাইকোর্টেরই অন্য একটি বিশেষ বেঞ্চে ফের জামিনের আবেদন করেন এক আইনজীবী। ফলে সেই আইনজীবীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করল আদালত।
আদালত সূত্রে খবর, আইনজীবীর এহেন আচরণে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ আদালত আগামী এক মাসের মধ্যে ওই টাকা রাজ্য লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অথরিটির তহবিলে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় বেঙ্গল পাবলিক ডিমান্ডস রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩ অনুযায়ী লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অথরিটিকে ওই আইনজীবীর কাছ থেকে টাকা আদায় করারও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, এই আইনজীবী এমন নজির গড়লেন, যা গোটা বিচার ব্যবস্থার সম্মানের ক্ষতি করল।
জানা গিয়েছে, আফিরউদ্দিন শেখ ওরফে আশাবুল শেখ নামে অভিযুক্তের জামিনের জন্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী অরিন্দম রায়। বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে অভিযুক্তের জামিনের জন্য আবেদন করেছিলেন অরিন্দমবাবু। এমনকী আদালতকে তিনি জানান, আগে এই মামলাটির জন্য কোথাও আবেদন করেননি। তখনই সরকারি আইনজীবী নিগিব আহমেদ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানিতেই জানিয়ে দেন, গত এপ্রিল মাসে মামলাটি বিশেষ বেঞ্চে শুনানির জন্য উঠেছিল। কিন্তু ওই বিশেষ বেঞ্চ জানায়, আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু হলে মামলাটির শুনানি রেগুলার বেঞ্চে হবে। সত্য গোপন করে পরের মাসেই অন্য বিশেষ বেঞ্চে ফের মামলাটির আবেদন করেন ওই আইনজীবী।
সত্য গোপনের প্রমাণ পাওয়ার পর আদালতের বক্তব্য, বারের একজন সদস্যের এমন ঘটনা ঘটানো যেমন উদ্বেগজনক, তেমনই দুঃখজনকও। তার পরেই আইনজীবী অরিন্দম রায়কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে আদালত। আইনজীবী অরিন্দম রায় তিনি বলেন, ‘এখন অনলাইনে মামলা করা হচ্ছে বলে কিছু অসুবিধে হচ্ছে। ভুল করেই ওটা হয়েছে। আদালতে আমি ভুল স্বীকার করে মামলা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আদালত তার রায় জানিয়ে দিয়েছে।’