রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি কি এবার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে? এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে বিরোধী দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মনে। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রেস মিটের পরই তাঁর দুটি বক্তব্যের কারণে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী? প্রথমত তিনি ঘোষণা করেছেন এখন থেকে রাজ্যের কোভিড সংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য একটি ক্যাবিনেট কমিটি গঠন করা হল, তাঁরাই পরিস্থিতি দেখবে। কারণ, তাঁর ‘আরও কাজ আছে। আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।’ এই নিয়েই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে যিনি দুদিন আগে মাইক হাতে প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, ঝাড়ু হাতে নেমে পরেছিলেন রাস্তায়, ছুটে বেড়াচ্ছিলেন হাসপাতালে তাঁর এমন কী কাজের চাপ হল যাতে কমিটি গড়ে দায়িত্ব দিতে হল। বিরোধীরা যদিও অভিযোগ করেছেন আসলে অবস্থা হাতের বাইরে বলেই আগের থেকে সরে পড়লেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন উঠেছে তাঁর হোম কোয়ারেন্টাইনের বক্তব্য ঘিরে। তিনি বলেছেন এখন থেকে করোনা পজিটিভ কোন রোগীও নিজের বাড়িতেই থাকতে পারবে। যদিও তারপরই বিতর্ক শুরু হওয়ায় অবস্থা বুঝতে পেরে স্বাস্থ্যদপ্তর একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় রোগীর বাড়ির লোক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবে আর বাড়িতে ঠিকমত ব্যবস্থা থাকলে রোগীও থাকতে পারবে। যদিও যে রাজ্যে সাধারণ মানুষকে হাজার বুঝিয়েও ঘরে রাখা যায় না সেখানে নিজের বাড়িতে পরিবারের সকলের থেকে আলাদা করে রাখা কি সম্ভব? এরপরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য,’আসলে এতদিন মুখ্যমন্ত্রী যে মিথ্যে কথা বলে আসছিলেন রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে তা ধরা পরে গেল। রাজ্যের কোন হাসপাতালেই আর জায়গা নেই।’ কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী, বিজেপির দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে সিপিএম-এর সুজন চক্রবর্তী সকলেই মনে করেন এতদিন মিথ্যে সংখ্যা দিয়ে রাজ্যবাসীকে বোকা বানানর চেষ্টা করে রাজ্যের সর্বনাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ মানুষের মনেও একই প্রশ্ন,’ তবে যে কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তা, মিডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, ওই হাসপাতাল থেকে সমস্ত সাধারণ রোগীকে সরিয়ে তিন হাজার বেডের করোনা হাসপাতাল করা হচ্ছে তা পুরোটাই আইওয়াস?
সত্যি কি কলকাতার কোন হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তির আর জায়গা নেই? কি অবস্থা হাসপাতালগুলির?
সরকারী হাসপাতাল | বেড সংখ্যা | ফাঁকা / ভর্তি |
---|---|---|
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল | করোনা রোগীর জন্য বেড সংখ্যা ৮২ | ১৬ টি ফাঁকা |
বাঙুর হাসপাতাল | বেড সংখ্যা ৩৫০ | ফাঁকা নেই |
ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ | করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। | |
আরজিতকর মেডিক্যাল কলেজ | করোনা রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। | |
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ | করোনা রোগীর জন্য আলাদা বেড নেই। |
আর বেসরকারি হাসপাতালগুলির কি অবস্থা?
বেসরকারী হাসপাতাল | বেড সংখ্যা | ফাঁকা / ভর্তি |
---|---|---|
ঢাকুরিয়া আমরি | ১৫ টি বেড | ভর্তি। |
পিয়ারলেস হাসপাতাল | ৭ টি বেড | ভর্তি। |
মেডিকা | ৫টি | ভর্তি। |
কলম্বিয়া এশিয়া | ৫টি | ভর্তি। |
আরএনটেগোড় | ৫টি | ভর্তি। |
বেলভিউ | ৮টি | কয়েকটি ফাঁকা আছে নিজেদের জন্য রাখা। |
উডল্যান্ড | ২টি | ভর্তি। |
নাগের বাজার আইএলএস | ৪টি | ভর্তি বন্ধ। |
তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবেন? তাই কি বাড়িতে থাকার পরামর্শ? আর জেলা হাসপাতাল গুলির অবস্থা আরও খারাপ। কোন রকম পরিকাঠামো ছাড়া কোথাও কোথাও ভর্তি করা হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগী। তাতে একদিকে ভীত হয়ে পরছে ডাক্তার নার্সরা অন্যদিকে বিপদে পরছে সাধারণ রোগীরা। তবে রাজনৈতিক বিতর্ক যে দিকেই যাক না কেন রাজ্যের অবস্থা আগামী কয়েক দিনে কোথায় যায় সেটি এখন দেখার।