দেশ লিড নিউজ

পরপর গণধর্ষণ যোগীর রাজ্যে!‌ উত্তরপ্রদেশ যেন নরক

মুখে যাই দাবি করা হোক না কেন, উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা যে একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। হাথরাসের ঘটনার এখনও রেশ কাটেনি। তার মধ্যেই ফের নারকীয় গণধর্ষণের ঘটনা ঘটল যোগীর রাজ্যেরই বলরামপুরে। যা নিয় ইতিমধ্যেই হইচই পড়ে গিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ এই রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে বলেই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এই অ্যাজেন্ডাকে সামনে রেখে বিজেপি ভোট বৈতরণী পার হয়েছিল।
হাথরাসের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের বলরামপুরে মাদক খাইয়ে এক দলিত যুবতীকে ধর্ষণ করা হল। শুধু ধর্ষণ নয়, দুষ্কৃতীদের নৃশংস অত্যাচারে শেষপর্যন্ত প্রাণও হারাতে হয়েছে ওই যুবতীকে। ২২ বছর বয়সী সেই দলিত ছাত্রীকে অপহরণের পর জোর করে মাদক জাতীয় দ্রব্য সেবন করানো হয়। তার পর সুযোগ বুঝে সেই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে কিছু দুষ্কৃতী। গণধর্ষণের পর সেই ছাত্রীকে রিকশা চাপিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার কয়েক ঘণ্টা পরই সেই যুবতী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
হাথরাস ঘটনার পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে নারী নিরাপত্তার চিহ্নমাত্র নেই। এবার এই ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা যোগী সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। এমনকী প্রতিটি ঘটনার তদন্তে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনের গাফিলতি ধরা পড়ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনা নিয়ে যোগী সরকারকে বিঁধেছেন। ফলে সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে চাপে যোগী সরকার।
ঠিক কী ঘটেছিল?‌ পরিবার সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণীকে অফিসের পথ থেকে অপহরণ করে দুই দুষ্কৃতী। তাঁকে মাদক খাওয়ানো হয়। তারপর লাগাতার চলে গণধর্ষণ। ভেঙে দেওয়া হয় হাত–পা–শিরদাঁড়া। ধর্ষণ এবং নির্যাতনের পর কার্যত জ্ঞান হারানো ওই তরুণীকে রিক্সায় বসিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‌আমার মেয়েকে ওরা বাড়ির উঠোনে ফেলে রেখে চলে গেল। উঠে দাঁড়াতে পারছিল না, কথাও বলতে পারছিল না ঠিকমতো। শুধু কাতরস্বরে বলেছিল, আমি মরতে চাই না।’‌ হাথরাসের পর বলরামপুরের এই ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বলরামপুরের গোসরি থানার অন্তর্গত এলাকায় থাকতেন ওই যুবতী। কমার্সের ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওই যুবতী। অভিযোগ, গ্রামেরই ৫–৬ জন যুবক তাঁকে অপহরণ করে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে। মাদক জাতীয় কোনও দ্রব্য সেই যুবতীকে খাওয়ায় ওই যুবকেরা। তারপর দুষ্কর্ম চলে।
এই ঘটনায় শাহিদ এবং সাহিল নামের দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজন নাবালক। মেধাবী ছাত্রী হিসাবে গ্রামে ওই যুবতী পরিচিত ছিল। একটি সংস্থায় কমিউনিটি রিসার্চ পার্সন হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি। পুলিশ ওই যুবতীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, শরীরের ভেতর ও বাইরের অঙ্গে গুরুতর চোট ছিল। ব্যাপক রক্তক্ষরণের জন্যই সেই যুবতীর মৃত্যু হয়েছে। হাথরাস, বলরামপুরের মতোই নৃশংসতা দেখা গিয়েছে বুলন্দশহর এবং আজমগড়েও। বুলন্দশহরে ১৪ বছর বয়সের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আজমগড়ে নির্যাতিতার বয়স মাত্র ৮ বছর। ওই শিশুকন্যাকে স্নান করানোর অছিলায় ধর্ষণ করেছে ২০ বছরের এক প্রতিবেশী যুবক। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখন উত্তরপ্রদেশ মহিলাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের নিরিখে দেশের মধ্যে শীর্ষে।