তৎকালীন রমনা রেসকোর্স ময়দান অধুনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা–স্তম্ভের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই উদ্যানে বঙ্গবন্ধু মঞ্চ, পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণ ইত্যাদি মিলিয়ে স্বাধীনতার স্মারকগুলি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে জোরকদমে। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালনের সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা–স্তম্ভের পর্দাও উঠবে।
করোনা মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল। তবে এখন এর নির্মাণকাজ চলছে পুরোদমে। এখানেই সেদিন গগনবিদারী স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছিল ঢাকার রেসকোর্স ময়দান। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মতোই দুলে ওঠছে মানবস্রোত। অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই, কখন আসবেন গণনায়ক। তাঁর নির্দেশ শোনার জন্যই নারায়ণগঞ্জ, আদমজী, ডেমরা, রূপগঞ্জ, কালিগঞ্জ, টঙ্গী–সহ বিভিন্ন স্থানের জুটমিল বন্ধ, বন্ধ অন্যান্য কারখানাও। কারণ সব মানুষের ঠিকানা ছিল রমনা রেসকোর্স ময়দান।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রমনা রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সর্বস্তরের মানুষের যে সমাবেশ হয়েছিল এবং তাতে যে সংখ্যক সাধারণ মানুষের সমাবেশ ঘটেছিল তা এশিয়ার এই অঞ্চলের কোনও দেশে হয়েছে বলে জানা নেই। সেদিন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তোমাদের যার কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো।’ সেই ভাষণের কুড়ি দিনের মাথায় ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বর্বর পাক হানাদার বাহিনী। তারা নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছিল। অবশেষে ৯ মাসের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ এবং লাখো শহিদের রক্ত ও মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে লালসবুজে খচিত পতাকা।
যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, ৯ মাস পর ঠিক সেই জায়গায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কম্যান্ডের জিওসি–ইন–সি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিল তিন প্রস্থে প্রস্তুত করা হয়েছিল। একটি প্রস্থ ভারত সরকার, দ্বিতীয় প্রস্থ পাকিস্তান সরকারের জন্য সংরক্ষিত এবং তৃতীয় প্রস্থ ঢাকার শাহবাগ জাদুঘরে সংরক্ষিত।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ঢাকা সফর করেন।তখনও ওই একই জায়গায় নৌকার আদলে তৈরি করা হয় ইন্দিরা মঞ্চ। দীর্ঘদিন ধরে ওই মঞ্চটি শোভা পাচ্ছিল রমনা রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক স্থানে। বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই স্থানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম স্মারক, যেখান থেকে দেওয়া হয়েছিল স্বাধীনতার ডাক এবং সমাপ্তিও ঘটেছিল যেখানে।
মঞ্চের পশ্চিম–উত্তর কোণে থাকবে আধুনিক রাইড–সহ দৃষ্টিনন্দন শিশু পার্ক এবং খাবারের দোকান। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এলে যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন তার জন্য সব ব্যবস্থাই থাকছে স্বাধীনতা স্তম্ভ ঘিরে। এই প্রকল্পের ভাবনা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রকের। নকশা করেছে স্থাপত্য অধিদফতর। বাস্তবায়নে রয়েছে গণপূর্ত অধিদফতর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। খরচ ধরা হয়েছে ২৬৫.৪৪ কোটি টাকা।
