বাংলাদেশ

ছিটমহলবাসীর মুক্তির পাঁচ বছর পূর্ণ

৬৮ বছরের ছিটমহলবাসীদের অবরুদ্ধ জীবনের মুক্তি আসে শেখ হাসিনার হাত ধরে। দীর্ঘ বছর ভারতবর্ষের উপর অত্যাচারের পর অবশেষে ব্রিটিশদের তাড়ানো সম্ভব হয় দেশভাগের মাধ্যমে। ব্রিটিশদের হাতেই ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের দায়িত্বটা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এমন প্রস্তাবের সাদর আমন্ত্রণ পেয়ে ওই বছরের ৮ জুলাই লন্ডন থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসেন র‌্যাডক্লিফকে। মুহূর্তটুকু বিলম্ব না করে তাঁকে প্রধান করে গঠন করা হয় সীমানা নির্ধারণ কমিশন।
তারপর ১৩ আগস্ট র‌্যাডক্লিফ সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন। ১৬ আগস্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় সীমানার মানচিত্র। বিশাল ভারতবর্ষ ভাগ করে ভারত–পাকিস্তান মানচিত্র প্রকাশ করে এক কলঙ্কের গোড়াপত্তন করলেন র‌্যাডক্লিফ। এই মানচিত্রের কারণে ১৬২টি খণ্ডভূমি অর্থাৎ ছিটমলের সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ অধুনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। আর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতের অভ্যন্তরে পড়ে।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সহজ সরল মানুষের ওপর রাতের অন্ধকারে হামলা করে। নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালাতে থাকে। বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক–বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পাশাপাশি মেয়েদের আবাসিকে হামলা চালিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। সারা বাংলায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে পাক সেনারা। তখন কাতারে কাতারে মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাল–সবুজে খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা অর্জিত হয়।
ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটাতে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চুক্তি সই করেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে এবং শেখ হাসিনার হাত ধরে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। আর ৬৮ বছরের রুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ কোনওদিন বাংলার মানুষ ভুলবে না।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট ইতিহাস সৃষ্টি হল গোটা দুনিয়ায়। ৬৮টি বছর পর বন্দিদশার অবসান ঘটে ছিটমহলবাসীর। তার সঙ্গে অবসান ঘটে পাকিস্তান–ভারত সীমানা নির্ধারণের অসহনীয় পরিস্থিতির। বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন, ছিটমহলের বিলুপ্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক কূটনৈতিক জয়। তারপরই তিনি রাস্তাঘাট, চিকিৎসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজনে যা দরকার তার কিছুই করেন। কয়েক বছরেই পালটে গিয়েছে অবহেলিত ছিটমহলের চিত্র।