সালটা ২০০১। জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল রাজনীতিকদের ঘুষ নেওয়ার ফুটেজে। সেই ফুটেজ ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তখন টলে গিয়েছিল গোটা দেশ। তহেলকা কাণ্ডের অন্তর্গত সেই প্রতিরক্ষা দুর্নীতি মামলায় দিল্লির স্পেশাল সিবিআই কোর্ট সাজা ঘোষণা করল বৃহস্পতিবার। আর এই সাজা ঘোষণায় করোনা আবহে ফের টলে উঠল দেশ।
কারণ সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক বীরেন্দ্র ভাট সমতা পার্টির প্রধান তথা তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্ন্ডাডেজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী জয়া জেটলিকে চার বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। জয়ার সঙ্গে চার বছর করে কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমতা পার্টির আর এক নেতা গোপাল পাচেরওয়াল এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এসপি মুরগাইকে। সুতরাং জর্জ ফার্ন্ডাডেজ তা দেখতে না পেলেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন বাকিরা। আজ সালটা ২০২০। ১৯ বছর কেটে গেল এই রায় দিতে।
আদালত সূত্রে খবর, দোষী সাব্যস্ত হওয়া তিনজনকেই এক লক্ষ টাকা করে জরিমানা করেছে সিবিআই আদালত। তিনজনকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে। সোলার ইমেজার তথা সৌর বিম্ব কেনার বরাত নিয়ে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তিনজনকে। ২০০১ সালে প্রথম ভারতীয় রাজনীতিতে স্টিং অপারেশন শব্দটি শোনা গিয়েছিল। তহেলকা ডট কম নামক নিউজ পোর্টালের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল ‘অপারেশন ওয়েস্টেন্ড।’ গোপন ক্যামেরা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের অন্দরমহলে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। যে ম্যাথু স্যামুয়েল বাংলায় তৃণমূল নেতা–মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে নারদ ফুটেজ তুলেছিলেন।
কী ছিল সেই ফুটেজে? ফুটেজে দেখা গিয়েছিল দু’লক্ষ নগদ টাকা নিচ্ছেন জয়া জেটলি। মুরগাইকে দেখা গিয়েছিল ২০ হাজার টাকা নিতে। চুক্তি ছিল এই—এই টাকার বিনিময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রক যে সৌর বিম্ব কিনবে তার বরাত যিনি টাকা দিচ্ছেন তাঁর কোম্পানিকে দিতে হবে। দুর্নীতি ধরার ফাঁদ সাজানো হয়েছিল। যা বুঝতে পারেননি তাঁরা। জর্জ ফার্নান্ডেজ যখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, তখন জয়া তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।
ঘটনাটি ছিল এইরকম—২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিকেলবেলা। দিল্লির নামী হোটেলে মুরগাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন ম্যাথু স্যামুয়েল। মুরগাইয়ের কাছে তাঁকে নিয়ে যান সুরেন্দ্র কুমার সুরেখা নামের ব্যক্তি। পরে তিনি এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। মুরগাইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়, তাঁকে ২০ হাজার টাকা হাতে দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে তিনি জয়া জেটলির সঙ্গে একটা তারিখ ‘ফিক্সড’ করিয়ে দেবেন ম্যাথুর। টাকা নিয়ে তারিখ চূড়ান্ত করতে উদ্যোগী হন মুরগাই। জয়ার কাছে সরাসরি না গিয়ে সমতা পার্টির নেতা গোপাল পাচেরওয়ালকে পাকড়াও করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। পাচেরেওয়ালের হয়ে তারপর জয়ার কাছে পৌঁছন ম্যাথু। তাঁকে দু’লক্ষ টাকা দেন তিনি। ২০ বছর আগে দু’লক্ষ টাকার মূল্যও ছিল অনেক।
