এবার পূর্বসূরির নিশানায় বর্তমান। আর তাতেই ঘোলাটে হয়ে গেল জাতীয় রাজনীতির অলিন্দ। লাদাখ সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সোমবার মুখ খুললেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজেকে ঢাকতে মিথ্যে বলছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উচিত নিজের শব্দচয়ন নিয়ে সতর্ক হওয়া। চিনের অবস্থান নিয়ে কোনও বিভ্রান্তি ছড়ানো প্রধানমন্ত্রীর উচিত নয়। সবসময়ই তিনি কী বলছেন সেই সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।’
শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ভারতীয় ভূখণ্ডে কোনও চিনের আগ্রাসন হয়নি। দেশের সীমান্ত কেউ লঙ্ঘন করতে পারেনি। কোনও পোস্টও দখল করেনি চিন। হ্যাঁ, আমাদের ২০ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। কিন্তু ভারতমাতার দিকে যাঁরা চোখ তুলে তাকানোর সাহস করেছিল, তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর বিস্তর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। আর এদিন সেই প্রসঙ্গেই দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, কর্নেল বি সন্তোষ বাবু এবং আমাদের যেসব জওয়ানরা দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁরা যাতে ন্যায়বিচার পান তা প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
চিনের আগ্রাসন প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্যের পরই তা নিয়ে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, কেউ যদি সীমান্ত পেরিয়ে না এসে থাকে, তবে ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যু হল কীভাবে? প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জবাব দিলেও তাতে সন্তুষ্ট হওয়া যায়নি। আজ মনমোহন সিং জানান, এবার জবাব না দেওয়া হলে জনগণের বিশ্বাসের প্রতি ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। এই মুহুর্তে আমরা ঐতিহাসিক মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের সরকারের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপই ঠিক করে দেবে যে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের সম্বন্ধে কী উপলব্ধি করবে। যাঁরা আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদেরই একান্তভাবে এই দায়িত্বভার বহন করতে হবে এবং আমাদের গণতন্ত্রে এই দায়িত্বটি থাকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের উপর।
আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছিল, ১৫ জুন সর্বদলীয় বৈঠকে গলওয়ানে ২০ জন জওয়ানের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় আমাদের ভূখণ্ডে চিনের কোনও অস্তিত্ব নেই। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় লঙ্ঘন নিয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা করছিল চিন। তারা নিষেধ শোনেনি। ১৬ বিহার রেজিমেন্ট সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে। নিয়ন্ত্রণরেখায় লঙ্ঘনের চেষ্টাও সফল হয়নি ওইদিন। যদিও এদিন মনমোহন সিং বলেছেন, চিন নির্লজ্জ এবং অবৈধভাবে এপ্রিল থেকে একাধিক আক্রমণ চালিয়ে গলওয়ান উপত্যকা এবং পানগং তসো হ্রদের মতো ভারতীয় ভূখণ্ডের কিছু এলাকা নিজেদের দখলে নিতে চাইছে। আমরা তাদের এই হুমকি ও ভয় দেখানো থেকে বিচলিত হতে পারি না এবং আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতার সঙ্গে কোনও আপোষের অনুমতি দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীকে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
