করোনাভাইরাস এবং লকডাউনের জেরে সংকটে পড়া অর্থনীতির হাল ফেরাতে ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার এই নিয়ে বিস্তারিত জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রক, অন্যান্য মন্ত্রক এবং বিভাগের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পরই এই প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী এই সংগঠিত দিশার পথ দেখিয়েছেন।
এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, ক্ষুদ্র–মাঝারি–কুটির শিল্পের ওপরে জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ছোট সংস্থায় যাঁরা চাকরি করেন তাদের জন্যও ইপিএফে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র–মাঝারি–কুঠির শিল্পে ১২ কোটি মানুষ জড়িত। এদের জন্যে ৩ লাখ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। কোনও গ্যারান্টি লাগবে না। ৪ বছরে শোধ করতে হবে। প্রথম ১ বছর সুদ দিতে হবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলতে পথ প্রশস্ত করবে এই আর্থিক প্যাকেজ। যা ভারতকে বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাবে। স্থানীয় ব্র্যান্ডকে বিশ্ব ব্র্যান্ড হিসাবে তুলে ধরার জন্য দেশের বিকাশের স্বার্থেই এই প্যাকেজ। সংকটে পড়া গরীব মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিকদের সরাসরি নগদ জোগানোর কাজ ইতিমধ্যেই পিএম কিষান, জনধন যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গরীবকল্যাণ যোজনায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ হয়েছে। নিরলসভাবে কাজ করছে সরকার।’
তাঁর কথায়, ধুঁকতে থাকা ছোট শিল্পের জন্য ২০,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। এতে ২ লাখ এমএসএমই উপকৃত হবে। ৫০,০০০ কোটি টাকা মধ্যম এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে দেওয়া হবে। যাতে তারা তাদের ব্যবসা বাড়াতে পারেন। ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত টার্ন ওভারে ২৫ কোটি ঋণ মিলবে। জিএসটি সংস্কারের লক্ষ্যে নেওয়া পদক্ষেপগুলি সফল হয়েছে। করদাতাদের কর দেওয়ার পদ্ধতি অনেকটাই সহজ করা হয়েছে। করদাতাদের দেওয়া ১৮ হাজার কোটি টাকা রিফান্ড করা হয়েছে। ফলে ১৪ লক্ষ করদাতা উপকৃত হয়েছেন।
এদিকে অনাদায়ী ঋণগ্রস্ত ক্ষুদ্র–মাঝারি শিল্পসংস্থাকে ঋণ দেওয়া হবে। ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হবে। এনপিএ’র আওতায় পড়া এই ধরনের দু’লক্ষ ইউনিট এতে উপকৃত হবে। তাদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে আর্থিক সহায়তা দেবে কেন্দ্র। বরাদ্দ ৫০ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি সংস্থার জায়গায় দেশীয় সংস্থা অংশগ্রহণ করবে। বিনিয়োগ ও লেনদেনকে মাপকাঠি করে দেশি সংস্থাগুলি লাভবান হবে। ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত গ্লোবাল টেন্ডার নয়। ই–মার্কেটে জোর দেওয়া হবে। ১৫০০০ টাকার মধ্যে আয়ের ব্যক্তিরা ইপিএফ থেকে টাকা তুলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
অন্যদিকে বেসরকারি কর্মীদের বেতন থেকে আগামী তিন মাস ১০ শতাংশ ইপিএফ কাটা হবে। ১২ শতাংশের পরিবর্তে আগামী তিন মাস ১০ শতাংশ পিএফ কাটা হবে। ফলে হাতে বাড়তি বেতন পাবেন কর্মীরা। ১৫ হাজারের নীচে বেতন, এমন কর্মীদের ইপিএফের টাকা সরকার দেবে। সরকারি কর্মীদের পিএফ ১২ শতাংশ হারে কাটা হবে। এই খাতে সরকার ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেবে। ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফসি, ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গৃহঋণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে ৩০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারি কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদাররা বাড়তি ছ’মাস সময় পাবেন। ১৪ মে থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত টিডিএস এবং টিসিএসের বর্তমান হারের ২৫% কমানো হয়েছে। এটি সমস্ত ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এতে কর হিসাবে দেওয়ার পরিবর্তে সাধারণ মানুষের হাতে ৫০ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দেবে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর দাখিল করা যাবে। ২০১৯-২০২০ সালের আয়কর দাখিলের পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা ৩১ জুলাই-৩১ অক্টোবর বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। অন্য দিকে অ্যাসেসমেন্টের ক্ষেত্রে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখটি এখন ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে এবং ২০২১ সালের মার্চের সীমাটি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।