ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়েছে। ফলে এদিন দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকেও তুলনামূলকভাবে কম জল ছাড়া হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ২০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। এদিন তা কমিয়ে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪০০ কিউসেক করা হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের বানভাসি এলাকার কিছু জায়গায় জলস্তর কিছুটা কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলা যায় না।
বর্ধমানের কাটোয়া, মঙ্গলকোট, বার্নপুর, বীরভূমের নানুর, খয়রাশোল, দুবরাজপুর, হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর, হুগলির আরামবাগ, খানাকুল, পুরশুড়া—বিস্তীর্ণ বানভাসি এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। পানীয় জলের জন্য হাহাকার, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সমস্যা এখন প্রকট হচ্ছে এসব এলাকায়। হাতেগোনা কিছু এলাকার রাস্তাঘাট থেকে জল নামলেও বেরিয়ে পড়েছে ভাঙাচোরা পথের কঙ্কাল।
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতির নতুন করে কোনও অবনতি না হলেও জল কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। কংসাবতী ব্যারেজ থেকে টানা চারদিন জল ছাড়ার ফলে পাঁশকুড়ায় নিউ কংসাবতী নদীবাঁধের সঙ্কট আরও বাড়ছে। আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে সেচদপ্তরের উদ্যোগে দু’লক্ষ বালিভর্তি বস্তা মজুত করা হয়েছে।
ময়না, তমলুক, পাঁশকুড়া, কোলাঘাটের বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন হওয়ায় ফুলচাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঘাটালের কয়েকটি জায়গায় জলস্তর কমলেও এখনও বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন। এদিন ঘাটাল থানার জয়কুণ্ডুতে বন্যার জল থেকে এক প্রৌঢ়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। মৃতের নাম তপন পাত্র(৫৬)। ৩০সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন বলে পুলিস সূত্রে জানা যায়। দাসপুর, চন্দ্রকোণার দু’টি ব্লকের বেশিরভাগ অংশ থেকে জল নামেনি। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই ২,৪০০ কোটি টাকার ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন রাজ্যকে রিপোর্ট দিয়েছে।
ভগবানপুর, পটাশপুর, ভূপতিনগর ইত্যাদি এলাকার মানুষ টানা প্রায় ২০ দিন একইরকমভাবে জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। এদিন এসব এলাকার পরিস্থিতি আকাশপথে ঘুরে দেখেন রাজ্য সরকারের পদস্থ কর্তারা। পটাশপুরের তালছিটকিনি গ্রামে কেলেঘাই নদীর বাঁধের সবচেয়ে বেশি অংশ ভেঙেছে। তা দ্রুত মেরামতির চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নদীয়ার বেশ কিছু এলাকায়। কারণ এই এলাকায় ভাগীরথীর জল বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ইতিমধ্যেই নদীয়ার শান্তিপুর, নবদ্বীপ, কালীগঞ্জ এলাকায় নদী তীরবর্তী নিচু জমিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে। কালীগঞ্জ ব্লকের তিনটি ত্রাণ শিবিরে প্রায় ১৫০ পরিবারকে সরানো হয়েছে। নবদ্বীপ শহরের বহু বাড়িঘর জলমগ্ন।