রাজ্য

মৃতের সংখ্যা ৯, সাহায্য মমতার

স্ট্র্যান্ড রোডে নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে বিধ্বংসী আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) পার্থসারথি মণ্ডলও। আগুনে ঝলসে এবং দমবন্ধ হয়ে চারজন দমকলকর্মী, হেয়ার স্ট্রিট থানার একজন এএসআই এবং একজন আরপিএফকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে মোট আটজনের দেহ শনাক্ত করা গিয়েছে। বাকি একজনের নাম, পরিচয় জানা যায়নি। মৃতদের মধ্যে অমিত ভাওয়াল (এএসআই), গৌরব বেজ, অনিরুদ্ধ জানা, গিরিশ দে, বিমান পুরকায়েতকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল এবং একজন রক্ষী রাত পর্যন্ত নিখোঁজ। ঘটনাস্থলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে।
পার্থসারথিবাবুর অফিস তিন তলায়। কিন্তু তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে ১২ তলায় লিফটের ভেতরে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় তাঁর রক্ষী সঞ্জয় সাহানির দেহ। অন্য লিফ্‌টে মেলে ৪ দমকলকর্মী–সহ ৭ জনের দেহ। দমকল আধিকারিক দীপ্তনু মুখোপাধ্যায় এবং অয়ন ঘোষ জানান, এত বড় বিল্ডিংয়ে আমাদের জিনিস তুলতে ফায়ার লিফট ব্যবহার করতেই হতো। কিন্তু যে তলায় আগুন লেগেছে তার থেকে সাধারণভাবে দুটো ফ্লোর আগে নামার কথা। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তানা হওয়ায় আগুনের তলাতেই পৌঁছে যায় লিফট। আর তাতেই বিপত্তি।
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানান, মৃতরা ভুল করে লিফটে চড়ে উঠে গিয়েছিলেন। সেখানেই আগুনের একটি লেলিহান শিখা তাঁদের গ্রাস করে। পাঁচজনকে লিফটের ভেতরে এবং আরও দু’জনকে বাইরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আগুন লাগা বহুতলের লিফটে ওঠা বড় ভুল বলে মানছেন সকলে। রেলের পক্ষ থেকে অসহযোগিতার অভিযোগও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‌রেলের ভবন হওয়া সত্ত্বেও তাদের তরফে কেউ আসেননি। ভবনটির ম্যাপও দমকলকর্মীরা চেয়ে পাননি। ফলে আগুন নেভাতে এবং উদ্ধারকাজ চালাতে দেরি হয়েছে। তদন্তকারী দল রেলের গাফিলতি খতিয়ে দেখছে।’‌
প্রশ্ন উঠেছে, যে বিল্ডিংয়ে আগুন লাগে, সেই বিল্ডিংয়ে আগুন লাগার পরেও কীভাবে লিফট চালু থাকে? পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েও কোন সিদ্ধান্তে বৈদ্যুতিক সংযোগের লিফট ব্যবহার করলেন দমকলকর্মীরা? উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও নির্দেশে অভাবেই কি বিপত্তি? জানা গিয়েছে, বহুতলের ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় দমকলকে। বিল্ডিংয়ের সামনে একটি বড় গাছ থাকায় হাইড্রলিক ল্যাডার ভেতরে ঢোকাতে অসুবিধা হয়। ফলে ওই গাছের ডালপালা কাটতে হয় দমকল কর্মীদের। এই কারণে প্রায় আধ ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ রাখতে হয়।
বহুতলে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও তা কাজে লাগেনি। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই বহুতলে ইমার্জেন্সি এক্সিট–সহ ৬টা লিফট থাকলেও আধুনিক কোনও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পরে কেউ ইমার্জেন্সি এক্সিট পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। তবে ৯ জনের মৃত্যুতে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দমকলের তদন্তকারী অফিসারদের সূত্রে খবর, লিফটের মধ্যে আটকে ঝলসে, দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন ডেপুটি সিসিএম ও তাঁর রক্ষী। যদিও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত করে তাঁরা মন্তব্য করতে নারাজ।