মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মৃত্যু! তাও নিউমোনিয়ায়। কিন্তু করোনা সন্দেহে দাহ করবে না শ্মশান কর্তৃপক্ষ। দেহ নিয়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে কাকুতি–মিনতি। আর তাতে কাজ না হওয়ায় শেষে ইলেকট্রিক চুল্লিতে মৃতদেহ ঢুকিয়ে সৎকারের কাজ শেষ করে পরিজনই। এমনই হৃদয়–বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারুইপুরে। এখন এই ঘটনা গোটা জেলায় লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জ্বর, সর্দি–কাশি, পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন পেশায় ভ্যানচালক উত্তম নস্কর (৩৭)। বাড়ি জয়নগর থানার চালতাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের হোগল ডহরি গ্রামে। তাঁকে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে তৎক্ষণাৎ করোনা পরীক্ষা করান চিকিৎসকরা। সেই রিপোর্ট আসার আগেই মঙ্গলবার গভীর রাতে মৃত্যু হয় উত্তমের। তারপর মৃতদেহ দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হয় বারুইপুর পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কীর্তনখোলা মহাশ্মশানে। সঙ্গে জমা করা হয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে মৃতদেহের সঙ্গে দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেট। সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা ছিল নিউমোনিয়ার কথা। কিন্তু তারপরও কেউ সৎকার করতে এগিয়ে আসেনি। যা নির্মম বলে মনে করছেন জেলার বাসিন্দারা।
দাহ করতে অস্বীকার করে শ্মশান কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, মৃত্যুর কারণ যখন নিউমোনিয়া, তখন করোনার সম্ভাবনা বেশি। করোনা রিপোর্ট আসেনি, এই খবর শুনে বেঁকে বসেন মহাশ্মশানের দায়িত্বে থাকা সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ শ্মশানের অন্যান্য কর্মীরা। শ্মশান কর্তৃপক্ষ অনড় থাকায় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে যোগাযোগ করতে শুরু করে মৃতের পরিজন। কিন্তু শ্মশান কর্মীদের মনোভাব বদলায়নি।
অগত্যা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারের লোকজনই দেহ কোনওরকম ইলেকট্রিক চুল্লিতে পৌঁছে দেয়। দাহ সম্পন্ন করে ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান ছাড়াই। মৃতের ভাই অশোক নস্কর বলেন, ‘দাদা পেটে ব্যথা, জ্বর–কাশি নিয়েই ভর্তি হয়েছিল বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে। সেখানে তার মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে আমরা দাহ করতে এসেছিলাম মহাশ্মশানে। কিন্তু এখানে করোনার সার্টিফিকেট দেখাতে পারিনি বলে পাঁচ ঘণ্টা দেহ ফেলে রাখতে হয়।’