দুর্গা হলেন শক্তিরূপেন সংস্থিতা। তিনিই নারীশক্তির আসল রূপ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেখানে মহিলাদের কোমল, ক্ষমতাহীন হিসেবে দেখা হয়, সেখানে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা মাতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। তাই দশদিন পুজোর যাবতীয় কাজের দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেন বর্ধমান শহরের পিলখানা রোডের সেনবাড়ির বধূরা। মহালয়ার দিন থেকেই কোমর বেঁধে নেমে পড়েন তাঁরা। জোরকদমে চলে পুজোর কাজ।
পূর্ববঙ্গের সময় থেকে ধরলে প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো সেনবাড়ির পুজো। দেশভাগের আগে অবিভক্ত বাংলাদেশের যশোর জেলার কালিয়া গ্রামে জাঁকজমক করে পুজো হতো। তারপর দেশভাগের পর পূর্বপুরুষরা বর্ধমানে চলে আসেন। শহরের পিলখানা রোডের পাশে পুরনো জমিদারি বাড়ির ধাঁচেই তৈরি হয় সেন পরিবারের বাড়ি। ১৯৪৮-৪৯ সালে আইনজীবী ভামিনীরঞ্জন সেনের হাত ধরে শুরু হয় এই পুজো। পুজোর কয়েকদিন খাওয়া দাওয়া, আচার অনুষ্ঠানে বাড়ি গমগম করে।
সারা বছর একসঙ্গে না হলেও পুজোর সময় পরিবারের সকল সদস্য হাজির হন বর্ধমানে। পুরনো রীতি মেনে সেনবাড়ির পুজোতে বাইরে থেকে মিষ্টি আনা হয় না। পুজোর যাবতীয় মিষ্টি তৈরি হয় বাড়িতেই, গৃহবধূদের হাতে। দেবীর নৈবেদ্যে চিঁড়ে-জিরে, এলোঝেলো আর পদ্ম চিনি— হাতে গড়া এই তিন মিষ্টি বাকি পারিবারিক পুজোগুলোর থেকে সেনবাড়ির পুজোকে আলাদা করেছে।।
তবে সেনবাড়ির পুজোয় মা দুর্গার ভোগ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। পুজোর দশদিনই মাকে মাছভোগ দেওয়া হয়। এছাড়াও ফ্রাইড রাইস, খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, ডাল তো রয়েইছে। পুজোতে নিরামিষের কোনও বালাই নেই। পুরনো প্রথা মেনে এবাড়ির প্রতিমা ‘মাছে ভাতে’ থাকেন। এমনকী দশমীর দিন সব জায়গায় মাকে খইদই খাইয়ে বিদায় দেওয়া হয়। কিন্তু সেন বাড়ির মায়ের বিদায়ী পাতে থাকে অন্য পদ। সেখানে পুরনো রেওয়াজ মেনে কচুর শাক, ইলিশ মাছ ভাজা, পান্তাভাত, নারকেল কুচো খাইয়ে মাকে বিদায় দেওয়া হয়।
বাড়ির বধূ মিতালি সেন বললেন, আমাদের বাড়ির পুজো প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। পুজোর সময় বাড়ির সকল সদস্য এক জায়গায় এসে হাজির হন। পুজোর কয়েকদিন বাড়ি গম গম করে। আমাদের মা থাকেন মাছে ভাতে। দেবীর নৈবেদ্যে নারকেলের চিঁড়ে-জিরে বর্ধমানের মধ্যে শুধু সেনবাড়িতেই হয়ে থাকে।