বিশ্বের প্রতিটি দেশে যে দেশ করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে সেই চিনের থেকে র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট কিনল ভারত সরকার। আর এই কিট কেনা নিয়ে উঠল দুর্নীতির অভিযোগ। এই র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের দাম ছিল ২৪৫ টাকা। যা আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ) কিনল ৬০০ টাকা দিয়ে। ফলে এই মধ্যবর্তী সময়ে ১৪৫ শতাংশ মুনাফা করা হল। তাই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ম্যায় খাতাভি নেহি হুঁ, খানে ভি নেহি দুঙ্গা স্লোগান এখনও আছে তো?
এদিকে করোনা পরীক্ষায় চিনা কিটের ব্যবহার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল বডি বন্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করল বেজিং। তাদের প্রোডাক্টে কোনও সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন চিনের দূতাবাসের মুখপাত্র জি রং। ভারত ছাড়াও আরও অনেক দেশেই এই টেস্ট কিট রপ্তানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চিন। চিন এই কথা বললেও উঠে আসছে অন্য তথ্য। দিল্লি হাইকোর্টের মামলার তথ্য বলছে, দেশে টেস্ট কিটের অভাব পূরণ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন আইসিএমআর দুটি সংস্থার মাধ্যমে চিন থেকে পাঁচ লক্ষ র্যাপিড টেস্ট কিট কেনে। তাতে দু’টি বেসরকারি সংস্থা কোটি কোটি টাকা মুনাফা করেছে। চিন থেকে আনা ৫ লক্ষ টেস্ট কিটের দাম ছিল ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। সেটাই আইসিএমআর কিনেছে ৩০ কোটি টাকায়।
এই সমস্ত কিট ত্রুটি–যুক্ত। বিভিন্ন রাজ্য থেকে তার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ফলে বেশি টাকা দিয়ে ভারত সরকার ত্রুটি–যুক্ত কিট কিনল। আর এখানেই প্রশ্ন, কেন যাচাই না করে তা কেনা হল? কেন এত বেশি দামে এই কিট কেনা হল? স্বাস্থ্যমন্ত্রক মঙ্গলবার জানায়, সবচেয়ে কম ৬০০ টাকাতেই এক একটি টেস্ট কিট মিলছে দেখে বরাত দেওয়া হয়েছিল। ৫২৮ টাকা থেকে ৭৯৫ টাকা দরে কেনা হবে বলে আগেই ঠিক ছিল।
চিনের সংস্থা থেকে ম্যাট্রিক্স ল্যাবস এই দেশে ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকায় ৫ লক্ষ কিট আমদানি করে। বিমান খরচ ধরা হলে প্রতি টেস্ট কিটের দাম পড়ে ২৪৫ টাকা। ম্যাট্রিক্স তার উপর ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা মুনাফা রেখে ২১ কোটি টাকায় সেগুলি রেয়ার মেটাবলিক্সকে বিক্রি করে দেয়। টেস্ট কিটের দাম পৌঁছয় ৪২০ টাকায়। তারপর রেয়ার ৯ কোটি টাকা মুনাফা রেখে আইসিএমআর–কে ৩০ কোটি টাকায় বিক্রি করে। কিটের দাম ৬০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। ম্যাট্রিক্স ও রেয়ারের মধ্যে বকেয়া পাওনা নিয়ে আইনি যুদ্ধ দিল্লি হাইকোর্টে পৌঁছতেই বিড়াল ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসে।
সূত্রের খবর, চিনের কিট নিয়ে যখন ল্যাজেগোবরে অবস্থা তখন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে কিট কেনার কথা ভাবছে কেন্দ্র। এখন লজ্জার মাথা খেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রক অবশ্য বলেছে, বরাত বাতিল করা হচ্ছে। কোনও অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়নি। তাই সরকারের এক পয়সাও জলে যাচ্ছে না। এই কিটগুলির ব্যবহার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। যার প্রভাব পড়তে পারে ভারত–বেজিং সম্পর্কে।
